বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

নতুন সংকটে পুঁজিবাজার

আজ শেষ হচ্ছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়

আলী রিয়াজ

আজ শেষ হচ্ছে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগের সময়সীমা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ব্যাংককে তাদের এক্সপোজারের অতিরিক্ত বিনিয়োগের শেয়ার বিক্রি করে দিতে হবে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যাংক তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিলেও এখনো ১২ থেকে ১৫টি ব্যাংক তা করতে পারেনি। ফলে পুঁজিবাজারে নতুন করে সংকট তৈরি হতে পারে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কমে গেছে এমনিতে। আবারও বিক্রির চাপ বৃদ্ধি পেলে সাধারণ

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট বাড়তে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো নতুন করে বিনিয়োগ না করলে বাজারে লেনদেনের হার কমে যেতে পারে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ এই সীমার বেশি ছিল, সেগুলোকে সীমার নিচে নামিয়ে আনার সময় শেষ হবে আজ ২১ জুলাই। জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নতুন করে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে চাইতে পারবে। তবে তা ব্যাংকগুলো করবে কিনা এটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে বাজারে ভালো শেয়ারের অভাব রয়েছে। এজন্য যেভাবে আস্থার সংকট কাটবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগসীমা আলাদা করেছে। কিছু ব্যাংকের মূলধন বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে। ফলে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। এর পরও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে, যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো অনুমতি ছাড়াই ঢালাও বিনিয়োগ করে। এটিকে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ ধসের পেছনে অন্যতম কারণ বলেও চিহ্নিত করা হয়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর নির্দেশনা জারি করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। কিছু ব্যাংক শেয়ার বিক্রি করা শুরু করলে বাজারে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিনিয়োগ সমন্বয় করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়, যা সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত করা হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের শুরুতে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ মূলধন হিসাবের বাইরে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়।

ফলে সীমার মধ্যে চলে আসে বেশির ভাগ ব্যাংকের বিনিয়োগ। তবে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ কয়েকশ’ কোটি টাকা রয়েছে তারা সমন্বয় করতে পারেনি। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মূলধন বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছে। যদিও দুটি ব্যাংকের আবেদন গৃহীত হয়নি। জানা গেছে, এই ব্যাংক দুটির বিনিয়োগ কয়েকশ’ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা হলে পুঁজিবাজারে বিক্রির চাপে ব্যাপক কমে যেতে পারে শেয়ারের দর।

ফলে বাজারভীতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন অনেকে। পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে এ বিনিয়োগ সমন্বয়ের জন্য সময় বাড়ানোর দাবিও তোলা হয়। কারণ হিসেবে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে হলে ব্যাংকগুলোকে অনেক শেয়ার বিক্রি করতে হবে। এতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক সুযোগ দিয়েছে। কিছু ব্যাংক মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন চেয়েছে, যা আমরা দিয়েছি। আশা করি নির্ধারিত সময়ে সব ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমার মধ্যে চলে আসবে।’ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘সীমার মধ্যেই থাকা উচিত ব্যাংকের বিনিয়োগ। তাদের এক্সপোজার সময়সীমা শেষ হলেও বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর