বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

বীমা সুবিধায় সৌদি প্রবাসীরা

মদিনা থেকে বিমানের ফ্লাইট

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

রেমিট্যান্স আয়ে শীর্ষ দেশ সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের পূর্ণ বীমার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর ফলে সৌদি আরবে কর্মরত প্রবাসীরা যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঝুঁকি, মৃত্যুঝুঁকি, সন্তানের শিক্ষা সুবিধাসহ বীমার আওতায় আসে এমন সব ধরনের  ঝুঁকির বিপরীতে সুবিধা পাবেন। শুধু তাই নয়, সৌদি থেকে সহজভাবে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর সুবিধা, প্রবাসী প্রজন্মকে দেশীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিদ্যালয়ের জন্য নিজস্ব জায়গা এবং মদিনা থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুর বিষয়েও কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো।

গত মাসের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরব সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি সেখানে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নিলে প্রবাসীরা বেশ কিছু সমস্যা তুলে ধরেন। পরে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরে সৌদি প্রবাসীদের সমস্যাগুলো সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে উদ্যোগ নিতে তার কার্যালয়কে নির্দেশ দেন। সূত্র জানায়, সৌদি প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর নির্দেশনাসংবলিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ১৪ জুন পররাষ্ট্র, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসামরিক বিমান চলাচল এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান— এ চার বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের পূর্ণ বীমা সুবিধা প্রদান, সৌদি আরবে স্থাপিত বাংলা স্কুলগুলোর জন্য নিজস্ব জমির সংস্থান, সৌদি প্রবাসীরা যাতে তাদের অর্জিত অর্থ সহজেই দেশে পাঠাতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া এবং প্রবাসীদের যাতায়াত সুবিধার্থে মদিনা থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালুকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে যে চারটি নির্দেশনা আছে তার দুটি বিষয় আমাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

 সে দুটি বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ তিনি বলেন, প্রবাসীদের অর্থ দেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও মোবাইল কোম্পানিগুলোও এখন প্রবাসী আয় দেশে আনতে ভূমিকা রাখছে। তবে এর পরও সৌদি আরবে ব্যবসারত কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা বাংলাদেশে না থাকায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশে অর্থ আনতে জটিলতা দেখা দেয়। বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৌদি প্রবাসীদের পূর্ণ বীমা সুবিধা প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীদের বীমার আওতায় আনতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) একটি নতুন পলিসির অনুমোদন দিয়েছে। সৌদি প্রবাসীরাও ওই বীমার সুবিধা নিতে পারবেন। এ ছাড়া তাদের জন্য পৃথকভাবে কোনো বীমা সুবিধা চালু করা যায় কিনা, সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। জানা যায়, প্রবাসীদের জন্য যে পলিসির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার আওতায় দেড় হাজার টাকা প্রিমিয়ামে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কাভারেজ দেওয়া হবে দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে। গ্রাহকের যে কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুজনিত দাবি পূরণ করবে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান। এ বীমার আওতায় বীমাগ্রহীতাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিদেশে যদি কোনো শ্রমিক মারা যান, তাহলে তার লাশ আনা ও দাফন সম্পন্ন হওয়া ছাড়াও পরিবারকে অর্থসহায়তা দেওয়া হবে। বীমার মেয়াদ হবে এক বছর। তবে তা নবায়নযোগ্য। চাকরির সময় বাড়ানো হলে নতুন করে আরেকটি বীমা করতে হবে। প্রিমিয়াম এককালীন পরিশোধ করতে হবে। প্রসঙ্গত, একক দেশ হিসেবে সৌদি আরব থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয় আসে দেশে। ২০১৪ সালে ৩ হাজার ২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আয়ের পর গত বছর দেশটি থেকে এ খাতে আসে ৩ হাজার ২৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছর দ্বিতীয় শীর্ষ প্রবাসী আয়ের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ৭৬১ মিলিয়ন ডলার।

সর্বশেষ খবর