বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

একজন ভুঁইয়া সাহেবের গল্প

মাহবুবুল হক শাকিল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম-সম্পাদক। তার আগেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। অতঃপর স্বাভাবিক নিয়মেই সংগঠনের লেজ থেকে ঝরে পড়ল মুসলিম শব্দ।

অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলায় জাতির পিতার প্রিয় তিন সিপাহসালার- রফিকুদ্দিন ভুঁইয়া, হাতেম আলী তালুকদার আর শামসুল হক। ত্রয়ীর নেতা ভুঁইয়া সাহেব।

একাধারে জেলা ছাত্রলীগ আর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতেন এই তিনজন। ভাষা আন্দোলনে ভুঁইয়া সাহেবের অবদান আজ হয়তো ইতিহাস ভুলে গেছে কিন্তু কোনো একদিন ইতিহাসের প্রত্নতত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসবে তার ভূমিকা।

স্বাধীনতাযুদ্ধের দিনগুলোতে ভুঁইয়া সাহেব ছিলেন ময়মনসিংহ অঞ্চলের জোনাল প্রশাসক, বঙ্গবন্ধুর সময়ে জেলা গভর্নর।

বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী জিয়ার দুঃশাসনের সময়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। এরশাদ ক্ষমতা দখলের পরে বৃদ্ধ বয়সে আবারও বার বার জেলে।

ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণার লোভ সামলাতে পারছি না। ভুঁইয়া সাহেবের স্ত্রী ছিলেন কুলসুম খালাম্মা। ময়মনসিংহ শহরে সবাই এই অনিন্দ্যসুন্দরী মানুষটিকে ডাকতেন মধুবালা নামে। আমি ডাকতাম ‘হ্যালো খালাম্মা’। তখন আমাদের বাসায় টেলিফোন ছিল না। ওই বাসায় ছিল। তাই এই বাল্যবেলার নামকরণ!

আমার আম্মা, হ্যালো খালাম্মা আর খোরশেদা খালাম্মার (বঙ্গবন্ধুর সময়ের এমপি) ছিল আজীবনের মিত্রতা। হ্যালো খালাম্মার বাসায় গেলেই খেতে দিতেন ময়মনসিংহের বিখ্যাত মালাইকারি। আমি বলতাম, কাটা চমচম।

সীজার ভাই, আরজু ভাই— তাদের দুই ছেলে দারুণ ক্রিকেটার। এখন একজন আ্যাারিজোনায়, আরেকজন অস্ট্রেলিয়ায়। দুই মেয়ে— সুইটি আপা আর জেনি আপা।

বিশ্বাস করা যায়! শর্টস পরে জেনি আপা ৪০০ মিটার দৌড়ে পাল্লা দিতেন ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম বা সার্কিট হাউস মাঠে!

আমি হ্যালো খালাম্মার বাসায় গেলেই দুই বোন আমাকে ডেকে নিয়ে যেতেন তাদের ঘরে, ভাইয়ের মতো ভালোবাসায়, আরজু ভাই অনুমতি দিতেন তার মহামূল্যবান (!) ক্রিকেট ব্যাট ধরতে।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ভুঁইয়া সাহেব পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। মৃত্যুর আগে সর্বশেষ এমপি হয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে। দীর্ঘদিন ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।

এখনো ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ মানেই আমাদের ভুঁইয়া সাহেব।

পুনশ্চ : আজ দুপুরে জেনি আপার সঙ্গে কথা হলো অনেকক্ষণ, ফোনে, আকস্মিক।

(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর