শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলো

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলো। বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলো সরব থাকলেও গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলার ঘটনার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলো নড়েচড়ে বসে। দলগুলো বলছে, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদ কার্যক্রম করে দেশে একটি গোষ্ঠী ইসলামের অপব্যবহার করছে। দলগুলো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করতে সরকারকে বাধ্য করার পাশাপাশি দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সজাগ হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। ইসলামের নামে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনাইটেড পার্টি, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদসহ দেশের সমমনা সব ইসলামী দল ও সংগঠন জঙ্গিবাদবিরোধী ইস্যুতে মাঠে সরব রয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব এম এ আউয়াল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কওমিপন্থিসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের সমন্বয়ে নতুন ইসলামী জোট ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। শোলাকিয়া ঈদগাহর ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদের সঙ্গে কথা হয়েছে। মাওলানা মাসঊদ সম্মতি দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য দল ও সংগঠনের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা হবে। তরীকত ফেডারেশন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করে ইতিমধ্যে মাঠে কাজ করছে। তিনি বলেন, দেশের কিছু কওমি মাদ্রাসা থেকে জঙ্গি সৃষ্টি হচ্ছে। কওমি মাদ্রাসা থেকে যাতে আর জঙ্গিবাদের সৃষ্টি না হয় সেজন্য কওমিপন্থি ওলামা ও দলের সমন্বয়ে তরীকত ফেডারেশনের নেতৃত্বে নতুন জোট করা হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জানতে চাইলে দলটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ আবদুর রহমান বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ১৬ জুলাই বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করেছি আমরা। গতকাল সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ জাতীয় সংসদ অভিমুখে বিক্ষোভ। বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে। এ ছাড়া ২৮ জুলাই থানায় থানায় মানববন্ধন এবং ৫ আগস্ট সব জেলায় ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকার ব্যর্থ হলে দলের আমির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’ ইসলামী ইউনাইটেড পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা ইসমাইল হোসাইন বলেন, ‘ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। কোরআন-হাদিসের আলোকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লিফলেট তৈরি করে সারা দেশে মসজিদ ও মাদ্রাসায় বিতরণ করছি। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আলোচনা সভা করেছি। আগামী শুক্রবার আবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কোরআন-হাদিসের আলোকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিষয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। এ ছাড়া সারা দেশে ইউনাউটেড পার্টির নেতা-কর্মীদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস রুখে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, ‘আগামী শনিবার দলের নির্বাহী কমিটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরব রয়েছি।’ তিনি বলেন, মানুষ হত্যা সরাসরি ইসলামবিরোধী। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহর ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘রমজানের পবিত্র এই দিনে এ ধরনের বর্বর ও অনৈসলামিক আক্রমণ কেবল ইসলামের শত্রুরাই করতে পারে। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।’ ‘এ হামলায় বিশ্বসন্ত্রাসের জনক ইসরায়েলের হাত থাকতে পারে। এটি দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’— এমনটাই মনে করেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের নিন্দনীয় ভয়াবহ সহিংসতায় আমরা স্তম্ভিত। দেশের মানুষ আতঙ্কে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ও অস্বস্তিতে ভুগছে। দলমতনির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন।’ জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, গুলশানের সুরক্ষিত এলাকায় যে বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে গেল, তা একেবারেই অকল্পনীয়। এ ঘটনা গোটা দেশবাসীকে স্তম্ভিত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না। এজন্য প্রয়োজন সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর