রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গি ও এক সন্দেহভাজনের দেহের রক্ত ও চুলের নমুনা এফবিআইকে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার জন্য গতকাল সকালে এফবিআই প্রতিনিধির কাছে এই নমুনা হস্তান্তর করেন মামলার তদন্ত সংস্থা ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)। ডিএনএ ছাড়াও হামলার আগে জঙ্গিরা শক্তিবর্ধক কোনো ওষুধ গ্রহণ করেছিল কিনা তা পরীক্ষা করবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। এদিকে, কমান্ডো অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জনের লাশ ২১ দিন ধরে সিএমএইচের হিমঘরে রয়েছে। পাঁচ জঙ্গি হলেন— মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং সন্দেহভাজন হলি আর্টিজানের শেফ সাইফুল। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, হামলায় জড়িত পাঁচ জঙ্গি ও এক সন্দেহভাজনের মাথার চুল ও রক্তের নমুনা এফবিআই প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্তে সহযোগিতার জন্য এ নমুনা দেওয়া হয়েছে। মূলত জঙ্গিদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে আমাদের দেশে নমুনার যেগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব নয়, সেগুলো তারা পরীক্ষা করে দেবেন। এফবিআই এসব নমুনার পরীক্ষার প্রতিবেদন কবে দেবে তা জানানো হয়নি। বুধবার ওই ছয়জনের প্রত্যেকের মৃতদেহ থেকে দ্বিতীয় দফায় ২০ মিলিলিটার করে রক্ত ও ৩০টি করে চুল সংগ্রহ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে একটি দল। এর আগে ময়নাতদন্ত করার সময় ওই ছয়জনের দেহ থেকে ৫ মিলিলিটার রক্ত, উরুর মাংস ও দাঁত রাখা হয় ডিএনএসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্য। কিন্তু মামলার তদন্ত সংস্থা সিটির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ছয়জনের লাশ থেকে দ্বিতীয় দফায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ১১ জুলাই ঢাকা মহানগর আদালতে তদন্তের স্বার্থে ও পরিচয় নিশ্চিত হতে পাঁচ জঙ্গি ও সন্দেহভাজন একজনের ডিএনএসহ বিভিন্ন পরীক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য তাদের দেহের অস্থি-মজ্জা, চুল, রক্ত ও রক্তমাখা কাপড়-চোপড় এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করে।
গত ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলা করে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। হামলা মোকাবিলা করতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ২ জুলাই সকালে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয় এবং ১৩ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। নিহত পাঁচজন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য। শেফ সাইফুল হামলাকারীদের সহায়তা করেছেন বলে পুলিশের ধারণা। এ ঘটনায় ৪ জুলাই রাতে মামলা হয়। পরে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এতে এফবিআই কারিগরি সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।