শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

মার্কিন কর্মকর্তাদের অমূলক সন্দেহে বাঁচল ৯৫ কোটি ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্কিন কর্মকর্তাদের অমূলক সন্দেহে বাঁচল ৯৫ কোটি ডলার

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফিরিয়ে দিতে ফিলিপাইনের নিম্ন আদালত সম্মতি দিয়েছে। রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত ফিলিপাইনের ক্যাসিনো মালিক কিম অংয়ের ফেরত দেওয়া অর্থ বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার একটি আবেদনে দেশটির নিম্ন আদালত ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ সরকার ১৫ দিনের মধ্যে টাকার দাবি নিয়ে ওই আদালতে গেলে এবং আদালত তাতে সম্মতি দিলে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রক্ষিত ওই অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) নির্বাহী পরিচালক জুলিয়া বাকে আবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বৃহস্পতিবার ম্যানিলায় ফিলিপাইন ন্যাশনাল ব্যাংকের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় জুলিয়া বাকে আবাদ আদালতের সম্মতি পাওয়ার বিষয়টি জানান।

চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে যে টাকা ফেরত পাওয়া গেছে, তা দ্রুত হস্তান্তরের পদক্ষেপ নিতে ফিলিপাইনের নতুন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ম্যানিলায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জন গোমেজও।

জুপিটার শব্দে বাঁচল ৯৫ কোটি ডলার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে মার্কিন ফেডারেল ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভুল সন্দেহে আটকে দেওয়া হয় ৯৫ কোটি ডলারের পেমেন্ট আদেশ।

ফিলিপাইনের আরসিবিসির জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ওই পেমেন্ট যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার অন্তুর্ভুক্ত ইরানের জুপিটার অয়েল ট্যাঙ্কার কোম্পানি রয়েছে। জুপিটার শব্দের কারণে পেমেন্ট অর্ডারে সিগনাল দেয়। ফলে ফেড কর্মকর্তারা ওই পেমেন্ট আটকে দেয়। যদিও এর আগেই ৫টি পেমেন্ট অর্ডারে ১০১ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট দিয়ে দেয় ব্যাংকটি। সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থ স্থানান্তরের আদেশে ‘জুপিটার’ শব্দটি ফেডারেল রিজার্ভ কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। যদিও ঠিক যে কারণে তাদের সন্দেহ হয়েছিল, তা পরে ভুল প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে পাঠানো অর্থ স্থানান্তরের ওই আদেশগুলোতে নানা ধরনের অসামঞ্জস্য থাকলেও সেসব নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ তা আমলে নেয়নি। ৩৫টি ভুয়া সুইফট মেসেজে ফেডারেল রিজার্ভের পাঠানো এক বিলিয়ন ডলার স্থানান্তরের আদেশের মধ্যে অধিকাংশ আটকে গেলেও চারটি আদেশে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে এবং একটি আদেশে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শ্রীলঙ্কায় যাওয়া টাকা আর অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। কিন্তু ফিলিপাইনে যাওয়া অর্থের পুরোটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে ফেলা হয়, এর একটি বড় অংশ চলে যায় জুয়ার টেবিলে। হ্যাকারদের অর্থ স্থানান্তরের আদেশগুলেতে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার শাখার কতগুলো অ্যাকাউন্টে জমা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তালিকায় জুপিটার নামে একটি অয়েল ট্যাঙ্কার থাকায় ফেডারেল রিজার্ভ কর্মীদের সন্দেহ হয় এবং বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। ইরানি তেলের ট্যাঙ্কার বা জাহাজ কোম্পানি ‘জুপিটারের’ সঙ্গে এই রিজার্ভ চুরির কোনো যোগাযোগ না থাকলেও ওই একটি শব্দেই আরও অর্থ ছাড়ের অনুরোধ আটকে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির এ ঘটনা আন্তঃব্যাংক লেনদেন কাঠামোর সুইফট সিস্টেমের কতগুলো উদ্বেগজনক দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ এবং তাদের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট সার্ভিস ইউনিটের (সিবিআইএএস) ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোও সামনে নিয়ে এসেছে। হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের নামে যেসব অর্থ স্থানান্তরের অনুরোধ নিউইয়র্ক ফেডে পাঠিয়েছিল, সেগুলো ছিল অন্য অনুরোধের চেয়ে ব্যতিক্রমী। সতর্ক সংকেত পাওয়ার পরও নিউইয়র্ক ফেড ব্যবস্থা নিয়েছে বেশ ধীরগতিতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর