রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

বন্যার অবনতি, লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যার অবনতি, লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সোনাইকাজী গ্রামে পানিবন্দী অনেক পরিবার —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বহু গ্রাম তলিয়ে গেছে এবং এসব স্থানে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী জীবনযাপন করছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যার পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। পানি বেড়ে ব্রহ্মপুত্রের বিপদসীমার ৫০ ও ধরলার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে দুধকুমার, তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে জনপদগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে প্রায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গাইবান্ধা : অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি আরও বেড়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত সবকটি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে নদীভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। লালমনিরহাট : ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে গতকাল দুপুর থেকে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে ১০ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা ৪ উপজেলার ৬৩ গ্রামের অন্তত লক্ষাধিক পরিবার পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব মানুষ। নীলফামারী : ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার সাত ইউনিয়নে ৬৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হলেও এতে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। দুর্গতদের জন্য আরও বেশি ত্রাণের প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জামালপুর : যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাইসহ শাখা নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি বেড়ে গতকাল সকালে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। জেলার ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী, কুলকান্দি, চিনাডুলী ও বেলগাছা এ ৪টি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সিরাজগঞ্জ : পাহাড়ি ঢল ও ভারীবর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বসতবাড়ি ও বাড়ির চারপাশে পানি ওঠায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। বগুড়া : যমুনা, বাঙ্গালী, করতোয়া নদীসহ সব উপনদী ও বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা নদীতে। এ নদীর তীর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে তৈরি স্পার ধসে গেছে। যমুনার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঙ্গালী নদীর দুকূল পানিতে ভরে উঠেছে। একই অবস্থা বগুড়া শহরের করতোয় নদীরও। সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও শাল্লা উপজেলায় অনেক ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টায় সুরমা নদীর ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। চারদিন ধরে এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে জেলা ও উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ। বন্যা উপদ্রুত এলাকার নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার চতুর্থ দিনেও অনেক এলাকায় পৌঁছায়নি সরকারি ত্রাণ সহায়তা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নে নদীভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এতে করে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এরই মধ্যে পদ্মার ভাঙনে সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউপির বাখরআলী, রোডপাড়া ও গোয়ালডুবি এলাকার প্রায় ৫০টি বসতবাড়িসহ প্রায় দেড়শ’ বিঘা ফসলি জমি ও আমবাগান নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের চন্দ্র নারায়ণপুর এবং নারায়ণপুর ইউনিয়নের আলিমনগর এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ : পদ্মায় তীব্র স্রোতের কবলে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে পাঁচটি ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে নৌরুটে ওই ফেরিগুলো চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম জানান, শুক্রবার রাতে স্রোতের কবলে রো রো ফেরি রুহুল আমিন, ডাম্প ফেরি রানীক্ষেত, রামশ্রী, রায়পুরা ও ফেরি কর্ণফুলী চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিকে গতকাল সকাল থেকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটে ৫ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে ছিল। মানিকগঞ্জ : পদ্মা-যমুনার তীব্র স্রোত অব্যাহত থাকায় ফেরি চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ পাড়ি দিতে ফেরিতে অতিরিক্ত সময় লাগছে। ফলে উভয় ঘাটেই যানজটের তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন দিনে এই নৌ-রুটের ফেরি বহরের ১৮টি ফেরির মধ্যে চলাচল করছে ১১ থেকে ১৪টি ফেরি। শেরপুর : উজান থেকে পাহাড়ি নদী পথে নেমে আসা ঢলের পানিতে ঝিনাইগাতীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দাড়িয়ার পাড়, কুনাগাঁও, দুপুরিয়াসহ বেশকটি গ্রামের শত শত মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সর্বশেষ খবর