সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

বই নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আবারও গভীর ষড়যন্ত্র!

এনসিটিবির বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ২

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসছে ২০১৭ সালের শুরুতেই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে আবারও গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মনে করেন মুদ্রণশিল্প ব্যবসায়ীরা। তাদের প্রশ্ন, কার ইন্ধনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি মানহীন কাগজ কিনছে। এনসিটিবির দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের রহস্যজনক ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে বই ছাপা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন মুদ্রণশিল্প ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, গত বছর এনসিটিবি খারাপ কাগজে বই ছাপিয়ে সরকারকে বিরূপ সমালোচনার মুখে ফেলেছিল।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রয়োজনে আমরা বই ছাপানো বন্ধ করে দেব। তবুও সরকারি পাঠ্যবইয়ের ব্যবহৃত কাগজের মান নিয়ে কোনো আপস চলবে না। দরকার হলে এনসিটিবির অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা। তথ্যমতে, মহাজোট সরকার ২০১০ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক (প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি) এবং মাধ্যমিক স্তরের (মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি) পাঠ্যপুস্তকসমূহ বিনামূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। এই বই ছাপানোকে কেন্দ্র করে বেপরোয়া বাণিজ্য শুরু করেছে এনসিটিবির এক শ্রেণির প্রভাবশালী অসাধু কর্মকর্তা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের নতুন বছরে মানহীন কাগজে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীর হাতে মানহীন পাঠ্যবই দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মুদ্রণশিল্প ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণের জন্য উৎপাদনে নেই-এমন প্রতিষ্ঠানকেও কাগজ কেনার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) অনুমোদন নেই-এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এনসিটিবির কাগজ কেনার তালিকায়। জানা যায়, এনসিটিবির টেকনিক্যাল কমিটি কাগজ কেনার টেন্ডার মূল্যায়ন করে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করে সম্প্রতি অনুমোদনের জন্য ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠিয়েছে। ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিলেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন এবং কাগজ উৎপাদনে সক্ষম নয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মানহীন কাগজ দিয়েই ছাপা হবে দেশের মাধ্যমিক স্তরের প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থীর পাঠ্যবই। আগামী বছরের মাধ্যমিকের বই মানহীন কাগজে ছাপা হলে প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকের বই নিয়েই সরকারকে বিব্রতকর সমালোচনার মুখে পড়তে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। সরকারকে পড়তে হবে বেকায়দায়। এ জন্য ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাওয়ার আগেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অভিযোগ ওঠা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে সক্ষম প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাগজ কেনার ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রাথমিকের বই আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ছাপানো হলেও মাধ্যমিকের বই ছাপা হয় দেশীয় দরপত্রের মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কাগজ কেনাকাটার বিষয়টি এখন ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কাগজ ছাপানোর ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নিতে হবে, নীতিমালায় এমন কোনো শর্ত নেই। কিছু প্রতিষ্ঠান কাগজ উৎপাদনই করছে না, তাদের কাছ থেকে কাগজ কেনা হচ্ছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানই কাগজ উৎপাদন করছে। জানা যায়, মাধ্যমিক স্তরের ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮২ হাজার পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য ২০ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন কাগজ কিনতে এনসিটিবি গত মার্চ মাসে টেন্ডার আহ্বান করে। ২০টি লটে ভাগ করা ১৬১ কোটি টাকার এই টেন্ডারে অংশ নেয় ১৪টি প্রতিষ্ঠান। তা থেকে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক পাঁচটি লটের কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়েছে গাজীপুর বোর্ড মিলস। প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এরপরও ওই প্রতিষ্ঠানকে কাগজ সরবরাহের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। কাগজ উৎপাদনে সক্ষম নয় এমন প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাগজ সরবরাহ করবে, আদৌ মানসম্পন্ন কাগজ সময়মতো সরবরাহ করতে পারবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর