সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

অ্যাম্বুলেন্সে গিয়ে স্বামীর নির্যাতনের জবানবন্দি দিলেন তাসফিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী মহানগরীর ডিঙ্গাডোবায় স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার রিফাহ তাসফিয়া আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে তাসফিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত-১-এ স্বামীর অমানুষিক নির্যাতনের জবানবন্দি দেন। আদালতের বিচারক মোকসেদা আসগার তার খাসকামরায় বেলা ১২টা ৫ মিনিট থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত রিফাহ তাসফিয়ার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে ভিকটিমের আইনজীবী জতিউল ইসলাম শাফি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি তার ওকালতির জীবনে এমন নির্মম নির্যাতনের ঘটনা আর দেখেননি। যৌতুকের জন্য তাসফিয়ার স্বামী তার দুই হাত ও এক পা ভেঙে দিয়েছেন। বুকের ও পাঁজরের দুটি হাড়ও ফেটে গেছে। মাথায় সেলাই লেগেছে ১৬টি। এসব নির্যাতন কেন হয়েছে, কীভাবে হয়েছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত—সেসব বিষয়ই জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন রিফাহ তাসফিয়া। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আদালতের তলবে রিফাহ তাসফিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারামতে এই জবানবন্দী দিলেন। ১১ জুলাই থেকেই তিনি রামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজই (রবিবার) তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এর পরই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়।’ মাত্র দুই বছর আগে রাজপাড়া থানার ডিঙ্গাডোবা এলাকার ফজলুল হকের ছেলে শামিউল হক সোহাগকে (৩০) ভালোবেসে বিয়ে করেন ভাটাপাড়া এলাকার আবদুস সালামের মেয়ে রিফাহ তাসফিয়া (২২)। বিয়ের পর তাদের কোলজুড়ে এসেছে একটি কন্যাসন্তান। তার বয়স এখন ছয় মাস। আদালতে তাসফিয়ার সঙ্গে তার মা হোসনে আরা পারভীন, চাচা মীর আবু সাঈদ শিমুল ও মামা ফজলে রাব্বীসহ আরও কয়েকজন নিকটাত্মীয় এসেছিলেন। তারা জানান, বিয়ের পর তাসফিয়ার সুখের কথা চিন্তা করে তার স্বামীকে তারা দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আরও ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের দাবিতে তাসফিয়ার ওপর নির্যাতন চালাতেন স্বামী সোহাগসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এরই ধারাবাহিকতায় ১১ জুলাই লাঠি, লোহার রড ও পাইপ দিয়ে তাসফিয়াকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন স্বামী সোহাগ, তার মা জাহানারা বেগম সুজি (৫০), বাবা ফজলুল হক (৫৬), ভাই ফয়সাল (৩০) ও সজীব (২৮)। ওই দিন খবর পেয়ে তারা তাসফিয়াকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় তাসফিয়ার মা এই পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ সোহাগকে গ্রেফতার করে। তখন থেকেই সোহাগ কারাগারে। তবে মামলার অন্য আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর