মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

হিসাব জমার প্রস্তুতি নেই দলগুলোর

নামসর্বস্ব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের অডিট রিপোর্ট নেবে না ইসি, নিবন্ধন বাতিলের হুমকিতে কয়েকটি রাজনৈতিক দল

গোলাম রাব্বানী

নির্ধারিত সময়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর। হিসাব দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন সময় থাকলেও এখনো অনেক দল প্রাথমিক কাজ শেষ করতে পারেনি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেক দল তা যেন ভুলে গেছে।

ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখনো হিসাব জমা দেয়নি। এখন পর্যন্ত একটি-দুটি দল হিসাব জমা দিলেও বাকিদের খবর নেই তাদের কাছে। এমনকি এবার নামসর্বস্ব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের হিসাব গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। যদি কোনো দল নির্দিষ্ট সময়ে হিসাব দিতে না পারে, তাহলে সেই দলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

গত বছরও সময়মতো হিসাব জমা দিতে পারেনি বড় রাজনৈতিক দলগুলো। শেষ মুহূর্তে হিসাব দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছিল ইসির কাছে। পরপর তিন বছর আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে ইসির হাতে। তবে এবার হিসাব জমা না দিলেই নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিতে পড়তে পারে কয়েকটি রাজনৈতিক দল।ইসি সূত্র জানিয়েছে, জুলাই মাসের আর মাত্র সাত দিন বাকি থাকলেও হিসাব জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেই রাজনৈতিক দলগুলোর। ছোট একটি-দুটি ছাড়া এখনো হিসাব জমা দেয়নি কোনো দল। তবে বিএনপি বলছে, দু-এক দিনের মধ্যে তাদের হিসাব জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও হিসাব জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, ইসির নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে এ হিসাব জমা দিতে হবে। চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে দলের তহবিল সংগৃহীত হলে কার বা কাদের কাছ থেকে কী ধরনের চাঁদা আদায় করা হয়েছে তাও নির্ধারিত ফরমের ছক অনুযায়ী জানাতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কোনো দলই এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়নি। এর মধ্যে অধিকাংশ দলের কর্তাব্যক্তিরা জানেনই না হিসাব জমা দেওয়ার সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি ফার্ম দিয়ে অডিট করায়নি। নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেসব দল অডিট রিপোর্টের কপি জমা দেবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এর ধারা ৯(খ)তে বলা হয়েছে, প্রতিবছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অব্যবহিত পূর্বের বছরের সংশ্লিষ্ট দলের আর্থিক লেনদেন একটি রেজিস্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি ফার্ম দিয়ে অডিট করিয়ে সে রিপোর্টের একটি কপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, যদি নিবন্ধিত কোনো দল পরপর তিন বছর কমিশনে তথ্য প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, তবে সে দলের নিবন্ধন বাতিল করার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে হিসাব জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি ইসির  দেওয়া সময়ের মধ্যে আমরা হিসাব জমা দেব।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘দ্রুতই আমরা হিসাব জমা দেব। আমাদের প্রস্তুতিও রয়েছে।’ ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখনো হিসাব জমা দেয়নি। তবে আরও সময়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত একটি-দুটি দল হিসাব জমা দিয়েছে। বাকিরা যোগাযোগ করেনি। অনেক দলের নেতাদের কাছে হিসাব জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলেও প্রথমেই কিসের হিসাব, কোন হিসাব এসব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এরপর তাদের মাথায় হিসাব জমা দেওয়া বিষয়ে চিন্তা এসেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত হিসাব জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এবার নামসর্বস্ব কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের অডিট করা হিসাবও জমা নেবে না কমিশন। ইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনো দলের অপূর্ণাঙ্গ হিসাব কমিশন গ্রহণ করবে না। নির্দিষ্ট সময়ে হিসাব জমা না দেওয়া দলগুলোর বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রতিটি দলকে হিসাবের ফরম দেওয়া হয়েছে। জুলাইয়ের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিধিমালা অনুযায়ী, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পূর্বের পঞ্জিকা বছরের আর্থিক লেনদেনের হিসাব প্রতিটি নিবন্ধিত দলকে জমা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্ম দ্বারা দলের হিসাব অডিট করাতে হবে। এ হিসাবে সদস্য সংগ্রহসহ কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে, বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনে জমা দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ, ১৯৭২-এর ৯০-এইচ(১) (সি) ধারা অনুযায়ী, নিবন্ধিত কোনো দল যদি পরপর তিন বছর কমিশনে তথ্য প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, তবে সে দলের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, এবার যেসব দল নির্ধারিত সময়ে হিসাব জমা দেবে না, তাদের শোকজ করা হবে। হিসাব পূর্ণাঙ্গ না হলে আবার চিঠি দিয়ে দলগুলোর কাছে নতুন করে হিসাব চাওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত বছর অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একটি এক পৃষ্ঠার নামসর্বস্ব হিসাব কমিশনে জমা দেয়। বেশ কিছু দল এ হিসাবের অডিট পর্যন্ত অনুমোদন করেনি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দল নির্দিষ্ট সময়ে কোনো হিসাবই জমা দেয়নি। পরবর্তী সময়ে কমিশন তাদের আরও এক মাস সময় দিয়েছিল।

সর্বশেষ খবর