মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিকাণ্ডে বিদেশ থেকে অর্থ আসছেই

সাহায্য পাচ্ছে বন্দী ও নিহতদের পরিবার, ৩১ জনের তালিকা গোয়েন্দাদের হাতে

সাখাওয়াত কাওসার

জঙ্গিকাণ্ডে বিদেশ থেকে অর্থ আসছেই

জঙ্গি কর্মকাণ্ডে এখনো টাকা আসছে বিদেশ থেকে। জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আসছে এসব অর্থ। অর্থদাতাদের মধ্যে দুবাইয়ে থাকা কয়েকজন কারাবন্দী ও নিহত জঙ্গি সদস্যদের পরিবারের জন্য নিয়মিতভাবে আর্থিক সাহায্য পাঠাচ্ছেন।

ডিবি সূত্র বলছে, দুবাইতে অবস্থানরত হুজিবির কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিয়মিতভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। তাদেরই একজন ‘শ’ আদ্যাক্ষরের একজন মুফতি। হুন্ডির মাধ্যমে আসা অর্থ ঢাকায় গ্রহণ করছেন হুজির এক শীর্ষ নেতা। অর্থের বড় একটি অংশ হুজিবির কারাবন্দী সদস্য, আহত ও নিহত জঙ্গিদের পরিবারকে নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। পরিবারগুলো হতদরিদ্র। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনা করে কোনো পরিবারকে ১০ হাজার, ১৫ হাজার, এমনকি ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। গ্র্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া ৩১ জনের তালিকার মধ্যে দুজন মৃত জঙ্গির নামও রয়েছে। এরা আফগান ফেরত মুজাহিদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক গোয়েন্দা জানান, ২০০৩ সালের পর থেকে অনেকটা নিভৃতেই কাজ করছে হুজিবি। তবে সংগঠনের প্রতিটি সদস্য অন্য সদস্যের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল। হুজিবির কিছু সদস্যের নাম আমরা পেয়েছি। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, আর্থিক সহায়তায় নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। গোয়েন্দাদের কাছেও এমন তথ্য রয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি দল নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ-হুজিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মাওলানা নাজিমুদ্দীন (৪০), প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান (২৪) ও আনাসকে গ্রেফতারের পর প্রাপ্ত তথ্যে জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। গ্রেফতারকৃত এই জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩১ জনের তালিকা। ডিবি বলছে, রাজধানীর কোতোয়ালি এলাকা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এদের গ্রেফতার করা হয়। এই সূত্র বলছে, মাওলানা নাজিম উদ্দীন মিরপুর-১ নম্বর সনি সিনেমা হলের বিপরীতে আকবর কমপ্লেক্সে বসবাস করেন। ওই কমপ্লেক্সেই ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ওমর ফারুকসহ অনেক সদস্য নিয়ে গোপনে সংগঠনের বৈঠকগুলো করে আসছিলেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, গ্রেফতারকৃত হুজিবির সদস্যদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া জঙ্গিরা যাতে কোনোভাবে মাথাচড়া দিয়ে উঠতে না পারে— সে জন্য পুলিশের প্রতিটি সদস্য বদ্ধপরিপর রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। সূত্র আরও বলছে, অর্থসহ বিভিন্ন প্রলোভনের কারণে মুসলমানরা অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক—এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে হুজিবি। এ জন্য শুরুতে তারা ওই ব্যক্তিদের জন্য মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম হাতে নেয়। সঙ্গে আর্থিক সহায়তাও করে। এতে কাজ না হলে বল প্রয়োগ বা হত্যার সিদ্ধান্ত রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের।

সর্বশেষ খবর