বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার সিলেট

এটা অর্থহীন কার্যক্রম --- ড. সালেহ উদ্দিন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার সিলেট

বাংলাদেশের জঙ্গি তত্পরতাকে বিশ্বব্যাপী  অস্থিরতার অংশ হিসেবে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন। তার মতে, ‘ধর্ম নিয়ে কিছু মানুষের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা পরমত ও পরধর্মে অসহিষ্ণু। এসব মানুষ উদ্দেশ্যহীনভাবে তাদের তত্পরতা চালাচ্ছে। তারা নিজেরাই জানে না কার বিরুদ্ধে, কী উদ্দেশ্যে মানুষের রক্তপাতের এমন জঘন্য খেলা খেলছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে একশ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী। জঙ্গিবাদ থেকে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে আসা জরুরি। এ জন্য জঙ্গিবাদ সমূলে উৎপাটন করতে হবে।’ তিনি বলেন, যেসব যুবক জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়াচ্ছে, তাদের কার্যক্রম পয়েন্টলেস বা অর্থহীন। তারা কী করছে তাও বুঝতে পারছে না। ব্রেনওয়াশ্ড হয়ে তারা সিরিয়া বা ইরাকে ছুটছে। সেখানে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের নামে নিজেদের বিপথে পরিচালিত করছে। দেশেও এ রকম কিছু যুবক অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন কাজে লিপ্ত রয়েছে। অথচ তারা জানে না, কাকে মারছে। বস্তুত তারা তো নিজেরাই নিজেদের মারছে।

তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর কারণ হিসেবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও যুক্তির চর্চার অপ্রতুলতাকে দায়ী করেন এই শিক্ষাবিদ। এর জন্য পারিবারিক দুর্বল বন্ধনও দায়ী বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও যুক্তির চর্চা কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এসব বিষয়ে গুরুত্ব কম দেয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশীয় কৃষ্টি-কালচার চর্চারও পর্যাপ্ত সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অশুভ শক্তি তরুণদের বিপথগামী করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে সহমর্মিতা কমে যাচ্ছে। ধর্মীয় উৎসবগুলোকে আমরা নির্দিষ্ট ধর্মের আচার হিসেবে বিবেচনা করছি। আমাদের ও আমাদের পরিবারকে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে। ধর্মীয় উৎসগুলোকে সর্বজনীন করতে হবে। এতে নতুন প্রজন্ম পরমত ও পরধর্মসহিষ্ণু হয়ে উঠবে। তারা ভিন্ন ধর্ম ও ধর্মের মানুষকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে। দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কেমন শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্তির চর্চা আছে কি না— এসব নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে, খুনোখুনি করে কেউ মারা গেলে শহীদ হয় না। যুক্তির মাধ্যমে ধর্মীয় বার্তা বোঝাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিজ্ঞান ও যুক্তির চর্চা থাকলে তাদের ভুল বুঝিয়ে কেউ জঙ্গি তত্পরতায় সংশ্লিষ্ট করতে পারত না। ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার হতে পারত। ছেলেমেয়েদের অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষায় পারিবারিক বন্ধন আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কাদের সঙ্গে মিশছে, কী করছে, কোথায় যাচ্ছে এর খোঁজখবর রাখতে হবে। কেবল রেজাল্টশিট দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করলে চলবে না।’

 

সর্বশেষ খবর