বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি অর্থায়নে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অর্থ লেনদেন হচ্ছে সারা দেশে, বাদ নেই মোবাইল ব্যাংকিংও

আলী রিয়াজ

জঙ্গিরা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সারা দেশে অর্থ লেনদেন করছে। বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স, এলসির মাধ্যমে বড় আকারের অর্থায়নের সঙ্গে দেশের মধ্যেও ছোট আকারে লেনদেন করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং ও বিভিন্ন কো-অপারেটিভ সংস্থার মাধ্যমে বেশি লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক দুই মাসে এমন শতাধিক লেনদেন সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এসব লেনদেনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সব ধরনের লেনদেনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে। কোনো ধরনের জঙ্গি অর্থায়ন বা লেনদেনে কোনো ব্যাংকের ত্রুটি ধরা পড়লে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকাতে সব বৈদেশিক লেনদেন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স, এলসির অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এক থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত আসা অর্থের উৎস ও ব্যবহার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে শতাধিক সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা সব ধরনের লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সব ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশ জারি করে বলেছে, এখন থেকে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় আমদানিকারকের নাম, মূসক নম্বর সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে খোলা এলসির ক্ষেত্রে ক্রয়কারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিআইএন অথবা ভ্যাট নম্বর ব্যবহার করতে হবে। এ নির্দেশ দিয়ে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকে রক্ষিত অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে আলাদা তহবিল গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দেশের আমদানি বাণিজ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আমদানিকারকদের মূসকের আওতায় নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক। মূসক নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ না করে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এলসি খোলার ফলে পণ্য খালাসে জটিলতা দেখা দেয়। এসব জটিলতা এড়াতে চারদফা শর্ত দিয়ে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে, আমদানিকারকের সঙ্গে পণ্য ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তিপত্রের সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে। এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ই-মেইলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানাতে হবে। আরেক চিঠিতে ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত অর্থ, ক্যাশ অন কাউন্টার, ক্যাশ ইন ট্রানজিট ও ক্যাশ ইন এটিএম বুথের ওপর ঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫৭ বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডিদের ডেকে এ বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক থাকার জন্য বলেছে। গভর্নর ফজলে কবির সব ধরনের লেনদেনে উৎস ও ব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থায়নের সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গিরা। এর মধ্যে বেশকিছু এনজিওর পাশাপাশি কো-অপারেটিভ সংস্থা রয়েছে। সারা দেশে শাখা রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনের মাধ্যমে লেনদেন করছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক না হওয়ায় সরাসরি কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে খোঁজ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অনুরোধ করেছে। রেমিট্যান্সের নামে আসা এক থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থের উৎস কোথায় ও এ অর্থ কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে তা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এসব অর্থ এসেছে প্রাথমিকভাবে সব গ্রাহকের নজরদারিতে আনা হয়েছে। গ্রাহকের সম্পর্কে জানতে ব্যাংকগুলোকে আলাদাভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্সের মাধ্যমে অর্থ আনা হয়েছে এমন চিহ্নিত শতাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জঙ্গিদের কাছে অর্থ আসতে পারে বলে সন্দেহ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী আছে তাদের অ্যাকাউন্টের লেনদেন সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এমন শিক্ষার্থীদের একাধিক অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ আসছে বাংলাদেশে। এসব অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যয় করা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে আমাদের নজরদারি খুবই কঠোর। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। জঙ্গি অর্থায়ন বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক লেনদেনের ব্যাংক শাখাগুলো নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে অর্থ আদান-প্রদান করে না। ফলে এসব অর্থ জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ খুব কম। এরপরও বিষয়টির ওপর নজর রাখছি। এমন অভিযোগ যদি পাওয়া যায় সে ক্ষেত্রে নীতিমালা পরিবর্তন অথবা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। সাম্প্রতিক সময়ে সবগুলো অভিযোগও খতিয়ে দেখেছি। সব ব্যাংক শাখায় আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। সন্দেহজনক লেনদেন হলেই নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হয়। ব্যাংকের অন্যান্য মাধ্যমের লেনদেনের বিষয়েও সচেতন থাকার নির্দেশ দেওয়া আছে।

সর্বশেষ খবর