বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জামায়াতকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রাজনীতিতে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা জামায়াতে ইসলামী তাদের নেতৃত্ব ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রায় ১৫ বছর পর আমির নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ বছরের শেষভাগে এ নির্বাচন করা হবে এবং আগামী বছরের শুরু থেকে নতুন নেতৃত্বে দল পরিচালিত হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন আমির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের নেতৃত্বে  দল পরিচালিত হবে। আমির নির্বাচিত হওয়ার জন্য যারা প্রার্থী হতে পারেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও আজীবন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সূত্র জানায়, নতুন আমির দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন হবে মজলিসে শূরার। এরপর সেক্রেটারি জেনারেল মনোনয়ন, নির্বাহী পরিষদ ও কর্মপরিষদ গঠন করা হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ায় পদ দুটি বর্তমানে স্থায়ীভাবে শূন্য রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও মজলিসে শূরার সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মকবুল আহমাদের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে আমির পদে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাঈদীর মধ্যে লড়াই হতে পারে। ডা. শফিকুর রহমানও প্যানেলে থাকবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে গোলাম আযমের উত্তরসূরি হিসেবে মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পান। এর তিন বছর পর ফের আমির হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ২০১০ সালের ২৯ জুন একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পর নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পান। ২০১১ সালের জুনে তার আমিরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। চলতি বছরে আমির নির্বাচন সম্পন্ন হলে প্রায় ছয় বছর পর নির্বাচিত আমির পাবে জামায়াত। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, এরই মধ্যে গোপনে আমির পদে নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে জামায়াতে ইসলামীতে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা এ টি এম মাসুমকে প্রধান নির্বাচন পরিচালক করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সম্মেলনে রুকনদের (সদস্য) সরাসরি ভোটে আমির নির্বাচিত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতের রোকন (সদস্য) সম্মেলন করা সম্ভব নয়। এ কারণে সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার রোকনের কাছে আমির নির্বাচনের ব্যালট পাঠানো হবে। এর আগে ২০০৬ সালে জরুরি অবস্থার কারণে সম্মেলন না হলেও সারা দেশে ব্যালট পাঠিয়ে রোকনদের ভোট নেওয়া হয়। এবারও একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। তার আগে আমির নির্বাচনের জন্য মজলিসে শূরা তিনজনের প্যানেল মনোনয়ন দেবে। রোকনরা এ তিনজনের মধ্যে যে কোনো একজনকে বেছে নেবেন। প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধের ইস্যুতে ২০১০ সাল থেকেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। বিচার বন্ধের দাবিতে রাজপথে সহিংসতার অভিযোগ, দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতারা আসামি হয়েছেন। অধিকাংশ নেতা আছেন কারাগারে, নয়তো আত্মগোপনে। ফলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন তারা। নিজামী, মুজাহিদ ছাড়াও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লাসহ জামায়াতের চার শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। নায়েবে আমির আবদুস সোবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সহিংসতার মামলা মাথায় নিয়ে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর দেশ ছেড়েছেন।

সর্বশেষ খবর