বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

হঠাৎ চালের দাম বাড়ল যে কারণে

মোস্তফা কাজল

হঠাৎ চালের দাম বাড়ল যে কারণে

তিন কারণে বাড়ছে চালের দাম। আমদানি কমে যাওয়া, বাড়তি দামে ধান কেনা ও ব্যবসায়ী  সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বাড়ছেই। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশে বর্তমানে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তবুও চালকল মালিকরা কয়েক দফায় পণ্যটির দাম বাড়িয়েছেন। তারা বলছেন, অটোরাইস মিলারদের কাছে এখনো বিপুল পরিমাণ ধান-চাল মজুদ রয়েছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ ধান-চাল গুদামজাত করে রেখেছেন তারা। চালের বাজারে দর বৃদ্ধি বা পতন মূলত তাদের ওপরই নির্ভর করছে। ফলে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করলে কিছুটা হলেও চালের দাম কমত বলে আশাবাদ সাধারণ ক্রেতাদের। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বোরো মৌসুমে সরকার ৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৬ টন চাল কেনার জন্য মিল মালিকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। এ চাল সংগ্রহের সর্বশেষ সময় নির্ধারণ করা হয় ৩১ আগস্ট। এ সময় পার হতে আর মাত্র মাসখানেক বাকি। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ে সরকার চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে ৭ লাখ ৫২ হাজার ১৮৮ টন। অবশিষ্ট চাল সংগ্রহ করতে না পারায় চালের দাম বাড়ছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। রাজধানীর কারওয়ান ও বাবুবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে মিনিকেটের দাম ছিল (ভালো মানের) ৫০ থেকে ৫২ টাকা, গতকাল তা ৫৫-৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পারিজাত বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৬  থেকে ৩৮ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। গুটি স্বর্ণা প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৩০ থেকে ৩১ টাকা। নাজিরশাইল প্রতি কেজি ৫৮  থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। অর্থাৎ ১০০ থেকে ১০৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। রাজধানীর বাবুবাজার ও বাদামতলীর পাইকারি বাজারে এক মাস আগে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ২৩-২৪ টাকা। বর্তমানে তা ২৯-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে সে সময় মিনিকেট চালের দাম ছিল কেজি ৩৬-৩৮ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ টাকায়। এ সময়ের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা। বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মফিজ মিয়া বলেন, মিলগেটে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট চাল ২ হাজার ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৪৩ টাকা। এর আগে প্রতি বস্তা ২ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করা হত। স্বর্ণা চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩০ টাকা। এর আগে ১ হাজার ৪৫০ টাকা বস্তা বিক্রি হয়েছে। অপর পাইকারি ব্যবসায়ী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বোরো ধান কাটা শেষ হতেই ধান মিলারদের কব্জায় চলে গেছে। তাই ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে তারা। সরকার বর্তমানে নগদ ৩২ টাকা কেজি দরে মোটা চাল সংগ্রহ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মিলাররা সে সুযোগে সরকারের কাছে চাল সরবরাহ দিচ্ছে। বাজারে ব্যবসায়ীদের চাল সরবরাহ দেওয়া হলে তা দামে কম এবং টাকা পেতে বিলম্ব হয়। কিন্তু সরকারের কাছে বিক্রি করলে নগদ টাকা পাওয়া যায়। বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা চালকল মালিকদের দিকে তাকিয়ে থাকি। তারা চালের যে দাম ঠিক করেন, আমরা সে দামেই চাল কিনে বিক্রি করি। চালের দাম বাড়া-কমা চালকল মালিকদের ওপর নির্ভর করে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অস্বীকার করে চালকল মালিক সমিতির নেতা হানিফ শোয়েব বলেন, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সব ধরনের চালের ওপরই প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়াও ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের ফলে বন্দর দিয়ে পণ্যটির আমদানি কিছুটা কমে গেছে। অধিক শুল্ক আরোপের কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশটি থেকে পণ্য আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বাজেটে চাল আমদানির ওপর কাস্টমস ডিউটি ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ করা হয়। চাল আমদানির এ ধারা ও বাজারে ধানের দাম বাড়তে থাকলে সামনের দিনগুলোয় চালের দাম আরও কিছুটা বাড়তে পারে বলেও মনে করে তিনি।

সর্বশেষ খবর