বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা

রিজার্ভ চুরির সব অর্থ উদ্ধার হবে : গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমার সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে। ইতিমধ্যে উদ্ধার করা অর্থ খুব দ্রুত আমরা পাব। এ ছাড়া দেশটির আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আশা করি, চুরি হওয়া সব অর্থ ফেরত পাবে বাংলাদেশ। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে এসব কথা বলেন তিনি। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) সাড়ে ১৬ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিয়োগ বাড়াতে বেসরকারি খাতে এই ঋণপ্রবাহ ধরে সংযত সঙ্কুলানমুখী মুদ্রানীতিতে উৎপাদনমুখী খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ প্রবৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও ঋণ সংগ্রহের সুযোগ রাখা হচ্ছে। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে (জানুয়ারি-জুন) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে রাখতে মুদ্রানীতির ভঙ্গি নির্ধারণ করা হয়েছে। মুদ্রানীতি ঘোষণা করে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি হওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে আমরা তত্পর রয়েছি। ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা ১৫.২ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করেছে। যা খুব দ্রুত সময়ে বাংলাদেশকে ফেরত দেবে। এ জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশটির এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) রিজার্ভ চুরিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছে। এ ছাড়া পুরনো সরকারের সময়ে ছয়টি সিনেট শুনানি হয়েছে। আরও শুনানি হবে। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায় প্রমাণ হলে আশা করি, আমরা সব অর্থ ফেরত পাব। গভর্নর বলেন, নতুন মুদ্রানীতি সংযত ও সঙ্কুলানমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক। পরিবেশবান্ধব মুদ্রা ও অর্থায়নের ধারাবাহিকতা এতে রক্ষা করা হবে। গত কয়েক বছর দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় রপ্তানির পাশাপাশি মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ আমদানি বেড়েছে। বিশেষ করে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় সরকারি আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা নতুন মুদ্রানীতি তৈরি করছি। আগামী ছয়মাসে ঋণপ্রবাহ যেন অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার না হয় সেদিকে কঠোর নজর রাখব আমরা। অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি চাহিদার জন্য উৎপাদনে ঋণ প্রকৃত সদ্ব্যবহার হয় সেদিকে নিবিড় নজরদারি রাখবে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি খাতে ঋণপ্রবাহে নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন খাতে সুদের হার সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। তিনি বলেন, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২ দশমিক ৫ শতাংশের মতো কমেছে। কিন্তু টাকার মান ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই সময়ে বাজার থেকে বিদেশি মুদ্রা কিনে নিতে হয়েছে। ফলে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। তিনি আরও বলেন, ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সাশ্রয়ী সুদে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া উৎসাহিত করা হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে আমানত ও ঋণ সুদ হার নিম্নমুখী। তা সত্ত্বেও আমাদের বাণিজ্যিক বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের মাত্রা প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, আবু হেনা মুহাম্মদ রাজি হাসান, উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমি, প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পালসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর