বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

আইকনিক টাওয়ার হবে জলসিঁড়িতে

মানিক মুনতাসির

রাজধানীর নতুন আবাসিক শহর পূর্বাচলে নয়, ১৪২ তলা স্বপ্নের আইকনিক টাওয়ার নির্মাণ করা হবে জলসিঁড়িতে। অবশ্য সে জায়গাটি পূর্বাচল আবাসিক শহরের কাছাকাছিই। তবে এ ভবন নির্মাণের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের কেপিসি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চলছে। গত মাসে এই কোম্পানিটির সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। অর্থ বিভাগের একটি সূত্র বলছে, অন্য কোনো নামিদামি আন্তর্জাতিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ করছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মধ্যেই এ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে। যদিও এখনো কোনো ধরনের বাস্তবমুখী কাজ শুরুই হয়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটি হবে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স, যা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। আনুমানিক ৭০ একর জমির ওপর নির্মেয় ১৪২ তলা ভবনের মূল আকর্ষণ হবে কনভেনশন সেন্টার ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স স্টেডিয়াম। কনভেনশন সেন্টারের ধারণক্ষমতা হবে পাঁচ হাজার লোকের। আর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মূল স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা হবে ৫০ হাজার লোকের। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পূর্বাচল নতুন শহর এবং ওই অঞ্চলের আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেপিসি গ্রুপের কর্ণধার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কালিপ্রদীপ চৌধুরী সম্প্রতি এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাব জানতে চেয়েছেন। চিঠিতে প্রাথমিক চুক্তির আনুষ্ঠানিকতার বিষয়েও জানতে চেয়েছেন কালিপ্রদীপ। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ উচ্চতার ওই টাওয়ার নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গী হতে চায় বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে এই ভবনের প্রাথমিক নকশা তৈরি করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গত বছর সেপ্টেম্বরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইকনিক টাওয়ার নির্মাণের জন্য ১০০ একর জায়গা প্রয়োজন জানিয়ে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেন। প্রথম দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এ ভবন নির্মাণের জন্য পূর্বাচল নতুন শহরে জায়গা দিতে রাজি হলেও পরবর্তী সময়ে পূর্বাচল নতুন আবাসিক শহরের পাশে জলসিঁড়িতে জায়গা দিতে সম্মত হয়েছে। রাজউকের একটি সূত্র জানায়, ওই ভবনে আন্তর্জাতিক কনভেনশন, এক্সিবিশন সেন্টার, হোটেল, থিয়েটার ও শপিং মল থাকবে। টাওয়ার ঘিরে তৈরি হবে আরও কয়েকটি ছোট-বড় ভবন ও নান্দনিক স্থাপনা। উচ্চতার দিক দিয়ে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটি হচ্ছে দুবাইয়ের ১৬৫ তলার বুর্জ আল খলিফা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বহুতল ভবনটি রয়েছে চীনের সাংহাইয়ে ১২৮ তলার। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নামে চতুর্থতম উঁচু ভবনটি নিউইয়র্কে শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে সৌদি আরবের জেদ্দায় নির্মাণাধীন ২০৫ তলা কিংবম টাওয়ার। বাংলাদেশের জলসিঁড়িতে ১৪২ তলা এই আইকনিক টাওয়ার নির্মিত হলে তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উঁচু ভবন। এ টাওয়ার নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা (১.৪ বিলিয়ন ডলার)। তবে এ ব্যয় আরও বাড়বে বলে মনে করে রাজউক। আইকনিক টাওয়ারের নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, তাকালে মুক্তিযুদ্ধের কথা মনে পড়বে। এটি নির্মিত হলে দুই দিক দিয়ে ’৭১ লেখাটি ফুটে উঠবে বলে জানা গেছে।

 

সর্বশেষ খবর