বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি উৎকণ্ঠায় রংপুর

ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে না
ড. নুর-উন-নবী

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

জঙ্গি উৎকণ্ঠায় রংপুর

দেশের উন্নয়ন যে গতিতে এগোচ্ছে, সে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্যই একটি গোষ্ঠী দেশের ভিতর থেকে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সহায়তায় ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কে এম নুর-উন-নবী। তিনি মনে করেন, এই মহলটিই সন্ত্রাস ও জঙ্গি তত্পরতা চালিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে। এ মহলটিকে প্রতিহত করতে পারলেই জঙ্গি ও সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব। উপাচার্য বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির সেই সময়ের ভূমিকার সঙ্গে এখনকার ভূমিকার কোনো পার্থক্য নেই। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বারবার ছোবল মারার চেষ্টা করছে বিভিন্নভাবে নানা কৌশলে। যখন সফল হচ্ছে না তখন তারা ভোল পাল্টিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তবে যত কৌশলই করুক, তারা কোনো দিন সফল হবে না। তিনি বলেন, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তরুণ সমাজই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই তরুণ সমাজ আজ বিপথগামী হচ্ছে। তাদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কারা তাদের বিপথগামী করছে তা সবার জানা। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আগে দরিদ্র, অর্ধশিক্ষিত ও ধর্মান্ধদের ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বিপথগামী করা হয়েছে। এখন উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী ও বিত্তবান পরিবারের তরুণ সন্তানদের অর্থের লোভ দেখিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গি তত্পরতায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তারা এখন মাদ্রাসার আলো নিভিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করছে। ড. নুর-উন-নবী মনে করেন, প্রকৃত নেতৃত্বের অভাব, রোল মডেলের অভাব, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অভাবের কারণেই অন্যভাবে আরেকটা শক্তি তরুণদের ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাবা-মা, আমাদের শিক্ষকরা নৈতিকতার রোল মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। আমরা শিক্ষার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে খুঁজতাম। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে অনুসরণের রোল মডেল খুঁজে পেতাম। বর্তমানে তরুণরা রোল মডেল খুঁজে পায় না। তিনি বলেন, পরিবার ও সমাজে সাংস্কৃতিক চর্চা নেই। অভিভাবকরা চান তার সন্তান মেধাবী হবে, ভালো জায়গায় পৌঁছবে। কিন্তু ভালো জায়গায় পৌঁছতে হলে সাংস্কৃতিক চর্চাও থাকতে হবে। পরিবার ও সমাজের মধ্যে সংযোগ থাকলে এ অভাব থাকত না। আমাদের সন্তানরা মূল্যবোধের, নৈতিকতার মডেল হিসেবে কাউকে অনুসরণ করতে পারছে না। ফলে তারা বিপথগামী হচ্ছে। এখন সময় এসেছে তরুণদের ফেরাতে হবে। তাদের মধ্যে হারানো মূল্যবোধগুলো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাবা-মার সঙ্গে সন্তানের, শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। জঙ্গি প্রতিরোধে তরুণ সমাজের বিকল্প নেই। উপাচার্য বলেন, এ দেশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তরুণ সমাজই বিদ্রোহ করেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলো। একটা বিচার নিয়ে তরুণ সমাজ জেগে উঠল। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গঠন করে তরুণদের সে আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। তরুণ সমাজ শাহবাগের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করল। সরকার আইন সংশোধন করতে বাধ্য হলো। শেষ পর্যন্ত কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে কাঙ্ক্ষিত রায় এলো। তার ফাঁসিও কার্যকর হয়েছে। জঙ্গি প্রতরোধে এগিয়ে আসতে হবে সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তবে এ ঐক্যে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী থাকতে পারবে না।

আজ সারা দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে পারলে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস রোধ করা সম্ভব হবে মনে করেন তিনি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আগামী ১ আগস্ট বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন, র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর