বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
বন্যায় বিপর্যস্ত দেশ

বাড়ছে দুর্ভোগ, খাদ্য পানীয় সংকট চরমে

প্রতিদিন ডেস্ক

বাড়ছে দুর্ভোগ, খাদ্য পানীয় সংকট চরমে

বন্যায় তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের বেশকিছু এলাকা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য ও খাবার পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বাড়ি-ঘর-সহায়-সম্পদসহ বাজার ও রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় তারা এ সংকটে পড়েছেন। এ ছাড়া কোনো কোনো অঞ্চলে বিভিন্ন মহল থেকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ফলে প্রশাসন থেকেও সরকারি সহায়তার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। দুর্গত এলাকা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ—

জামালপুর : যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গতকাল সকালে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বাড়ায় সরিষাবাড়ী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে বন্যাকবলিত হয়েছে। সবমিলিয়ে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী এই পাঁচটি উপজেলার ২৫টির বেশি ইউনিয়নে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। এদিকে বন্যার পানি উঠায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। দুর্গত এলাকায় খাবার, পানীয় জলের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। কাজ না থাকায় নিম্ন আয়ের দিনমজুররা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। গাইবান্ধা : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঘাঘট নদীর পানি গতকাল আরও ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের বালাসী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পানির চাপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট, সৈয়দপুর, সাঘাটা উপজেলার কামারপাড়া, সিংড়িয়া এবং গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের অন্তত ১২টি পয়েন্টে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এবং পাউবো সেগুলোতে বালির বস্তা ফেলে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এদিকে ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের উত্তর খাটিয়ামারী গ্রামে গতকাল পানিতে ডুবে লাল চান মিয়া (৫১) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামসুল আজম জানান, নিয়মিতভাবে বন্যার্তদের মাঝে চাল, ডাল ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি থাকায় গত মঙ্গলবার অতিরিক্ত ত্রাণের চাহিদা জানিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ : উপজেলার চরাঞ্চলের ৪২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার জানান, চরাঞ্চলের যে প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে সে সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইউএনও হাবিবুল আলম জানান, সরকারিভাবে যে পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ দিয়েছে তা বিতরণ শেষের দিকে। আরও নতুন করে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। সুনামগঞ্জ : বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় সুনামগঞ্জে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭৯ সেন্টিমিটার থেকে নেমে ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে এখনো পানিবন্দী অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন পাঁচটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা প্লাবিত এলাকার নিম্নআয়ের মানুষেরা পড়েছেন খাদ্য সংকটে। অনেক এলাকায়ই রয়েছে খাবার পানির সংকট। সিরাজগঞ্জ : পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে বন্যা পরস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছেন। পাশাপাশি ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট-বাজার তলিয়ে গেছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকেই ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট। অধিকাংশ স্কুলগুলোতে পানি ওঠায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা বিঘ্ন ঘটছে। অন্যদিকে, এনায়েতপুর ও চৌহালীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে প্রায় অর্ধশতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়েছে। অন্যদিকে পানিবন্দী মানুষগুলোর কাজকর্ম না থাকায় তারা অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করছেন। অধিকাংশ স্থানে এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। কুড়িগ্রাম : ১০ দিন ধরে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় গতকাল ধরলার পানি বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটর ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বেড়েছে তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও। ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তলিয়ে গেছে ৫০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। লালমনিরহাট : গতকাল সকালে তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে জেলার চর বৈরাতি এলাকায় প্রায় ৪০০ মিটার গাইড বাঁধ ধসে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ৯টি গ্রাম। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নদীপাড়ের লাখো মানুষ। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। সরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পানিবন্দী পরিবারগুলো তাদের পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সর্বশেষ খবর