শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

সন্ত্রাসীরাও প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে, সতর্ক থাকুন

উন্নয়ন উদ্ভাবন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্ত্রাসীরাও প্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছে, সতর্ক থাকুন

উন্নয়ন উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোনো জঙ্গি-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে যেন জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপকভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে যেমন ভালো কাজ হচ্ছে, আবার জঙ্গি-সন্ত্রাসীরাও প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বর্তমানে জঙ্গিবাদ নতুন উপসর্গ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলার মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না— এই নীতি নিয়েই আমাদের চলতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে ‘উন্নয়ন উদ্ভাবনে জনপ্রশাসন-২০১৬’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সামিটের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এক্সেস টু ইনফরমেশন’ (এটুআই) প্রকল্পের উদ্যোগে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের বিভিন্ন উদ্ভাবন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার জন্য এই সামিটের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনপ্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনারা সবাই মিলে একবিংশ শতকের উপযোগী আধুনিক, সেবামুখী, চৌকস জনপ্রশাসন গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল মানবসম্পদ। মানবসম্পদকে আরও প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত করতে পারলে এ দেশ কোনো দিনই পিছিয়ে থাকবে না। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন— জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন টেনাসিস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘এটুআই’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের পরিচালনায় এবং একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের ওপর নির্মিত ৩০ মিনিটের একটি থ্রিডি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া দেশকে বর্তমান সরকারের ডিজিটালাইজেশনে রূপান্তরের তথ্যচিত্র নিয়ে ‘রপান্তরের গল্প’ (টেল অব ট্রান্সফরমেশন) প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও চট্টগ্রাম-এই তিন জেলাকে শ্রেষ্ঠ জেলা এবং শ্রেষ্ঠ বিভাগ হিসেবে ঢাকাকে সম্মাননা প্রদান করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সরকার। সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য অর্জনের চাবিকাঠি। আমরা যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন সবকিছুই চলত এনালগ স্টাইলে। ইন্টারনেট তো দূরের কথা কম্পিউটার ব্যবহার করার বিষয়েও ছিল অনেকের অনীহা। আমার কাছে মন্ত্রণালয় থেকে যে ফাইলগুলো আসত তা ছিল টাইপ রাইটার মেশিনে টাইপ করা, কম্পিউটার যাও ছিল তাও পড়ে থাকত শোপিসের মতো। তিনি বলেন, আমার বলতে দ্বিধা নেই, এ ব্যাপারে আমাকে পরামর্শ দিয়েছে, শিক্ষা দিয়েছে আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তার পরামর্শ ছিল আমরা যেন কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশের ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিই। তাহলেই এগুলো সার্বজনীন হবে। আমি জয়ের পরামর্শ মোতাবেক তাই-ই করলাম। সেই সঙ্গে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিনা খরচে সাবমেরিন ক্যাবলের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে বাংলাদেশকে যুক্ত করার সুযোগ হাতছাড়া করেছিল- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবমেরিন ক্যাবলের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে যুক্ত না হওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলেছিল, এ সংযোগ নিলে বাংলাদেশের সব তথ্য চুরি হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমরা আবার সরকার গঠন করি। আমাদের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর অন্যতম অঙ্গীকার ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি আমার ছেলে জয়ই আমাদের উপহার দিয়েছে। তারই পরামর্শে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করি। এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। তিনি বলেন, আমরা সারা দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছি। এখান থেকে ২০০ প্রকার ই-সেবা দেওয়া হচ্ছে। দেশের সব উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কানেকটিভিটি চালু করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ দ্রুত ও সহজতর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত, উন্নততর ও সহজলভ্য সেবা দিতে হলে আমাদের আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আমি মনে করি, জনপ্রশাসনের প্রতিটি সদস্যের সে যোগ্যতা, দক্ষতা আছে। শুধু চর্চা করার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছি। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ প্রতিটি স্তরের সরকারি কর্মচারীদের দেশের উন্নয়নের জন্য নতুন করে ভাবতে হবে। সেবা প্রদানের নতুন কৌশল ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। যে যেখানে দায়িত্বে থাকবেন সেখানে আপনাদের চিন্তা-চেতনা দিয়ে দেশকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায় সে বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি করি এ দেশের জনগণের জন্য। তাদের সেবা দেওয়া, তাদের জীবনমান উন্নত করা, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা, উন্নত করা এটাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের সেবা করাটাই আমাদের কাজ। জনগণ আমাদের কাছে আসবে না, আমরাই বরং জনগণের কাছে গিয়ে তাদের সেবা দিয়ে আসব। এটাই হবে আমাদের চিন্তা-চেতনা। এটাই আমাদের নীতি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশে ‘উদ্ভাবনী চিন্তা ও তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশকে প্রাধান্য’ দেওয়ার কথা এবং বঙ্গবন্ধুর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার এসব পদক্ষেপই আমাদের আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি। তার এই পদক্ষেপগুলো আমাদের আগামী দিনের চলার পথ দেখিয়েছে।

সর্বশেষ খবর