সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

উগ্রবাদ কখনো ঘাঁটি গাড়তে পারেনি

-------- ডি এম শাহিদুজ্জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

উগ্রবাদ কখনো ঘাঁটি গাড়তে পারেনি

জঙ্গিবাদ কেবল আমাদের দেশীয় সমস্যা নয়, এটা বৈশ্বিক। সামাজ্যবাদীরা অস্ত্র ব্যবসা করার জন্যই জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। আর আমাদের দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে খনিজসম্পদ ও বন্দর দখল করার জন্য।

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে এসব কথা বলেন যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও উদীচী যশোরের সভাপতি ডি এম শাহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, উগ্রবাদ এ দেশে কখনো ঘাঁটি গাড়তে পারেনি। হাজার বছর ধরে আমরা সব ধর্মের মানুষ সৌহার্দ্যের মধ্য দিয়ে এই ভূখণ্ডে বসবাস করে আসছি। এটাই আমাদের ঐতিহ্য। শাহিদুজ্জামান বলেন, কখনো কখনো সাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদের এই ঐক্যকে ভাঙার জন্য উসকানিমূলক তত্পরতা চালিয়েছে। বর্তমান সময়টাকেও তারই একটি রূপ বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আমরা এখনো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার প্রথম শিকার হয়েছিল উদীচী, যশোরে। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতে যশোর টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত হন। আহত হন কয়েকশ’ মানুষ। উদীচী যশোরের সভাপতি বলেন, এই জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করার জন্য সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো সংস্কৃতি। আমাদের যে অসাম্প্রদায়িক উৎসবগুলো রয়েছে, সেগুলোকে বেশি বেশি করে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তৃণমূল থেকে মানুষকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। এক সময় স্কুলগুলোতে সংস্কৃতির বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত চর্চা হতো, এগুলো আবার শুরু করতে হবে। স্কুল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি স্কুলে গান, নৃত্য, শরীর চর্চা, চিত্রাঙ্কন বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এগুলো চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে। শাহিদুজ্জামান বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশ দ্বিখণ্ডিত করার সময় সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা হয়েছিল। এখন যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করা হয়, তখন পুনরায় সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়া শুরু হয়, আমি মনে করি সম্পূর্ণটাই রাজনৈতিক বিষয়। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের মানুষ ’৫২ এবং ৭১’কে ধারণ করে। এই ৫২ এবং ৭১’এর মূল বিষয়ই ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা। আজকের প্রজন্মের কাউকে কাউকে যে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, তার মূলেও রয়েছে এই ৫২ এবং ৭১’এর চেতনাবিরোধীরা। এরা অতীতেও সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও সফল হবে না বলে বিশ্বাস করি। শাহিদুজ্জামান বলেন, এ দেশ জঙ্গি মুক্ত হবেই। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনার সাংস্কৃতিক কর্মীরা কখনো ব্যর্থ হইনি, এবারও হব না। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে সরকার প্রাথমিকভাবে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা ঠিক আছে। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান না। আমরা দেখছি, জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে নিম্নবিত্ত আর উচ্চবিত্তের সন্তানরা। এর একটা কারণ হলো এরা প্রোপার গাইড পায় না। এদের মধ্যে সবসময় হতাশা বিরাজ করে। এই সুযোগে এদের মধ্যে সহজেই মাদকাসক্তি ও ধর্মীয় উন্মাদনা ঢুকিয়ে বিপথগামী করা যায়। তিনি বলেন, এ থেকে পরিত্রাণ পেতে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নজরদারিতে নিয়ে আসতে হবে। সেখানে কেবল বাণিজ্যিক শিক্ষাই নয়, সাংস্কৃতিক চর্চাও যাতে অব্যাহত থাকে, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর