সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুফতি হান্নানসহ আট জঙ্গির মামলা শুনানি হাইকোর্টে

রমনা বটমূলে বোমা হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ আট জঙ্গির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এ মামলায় আট জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ডসহ আরও ছয়জনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। ১৬ বছর আগে বর্ষবরণের মতো অরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনার মামলাটি এবার উচ্চ আদালতে শুনানির জন্য এসেছে। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে বিগত কয়েকটি কার্যদিবসে শুনানির জন্য এসেছে। সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই মামলাটি ৫০ নম্বর ক্রমিকে ছিল। উল্লেখ্য, বিচারিক আদালতের রায়ের পর এ মামলায় জঙ্গিদের জেল আপিল, ফৌজদারি আপিল ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে এসেছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, শুনানি শুরু হলে হাইকোর্টে এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে হয়তো বেশি দিন লাগবে না। এর আগে ১৫ জুন গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২২ জনের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন অনেকে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রমনা বটমূলে বোমা হামলার আলোচিত এই মামলাটি শুনানির মাধ্যমে অতি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছি। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’ ৬১ জনের সাক্ষ্য-গ্রহণ শেষে বোমা হামলার ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের ২৩ জুন এ মামলার রায়ে ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রুহুল আমীন আটজনকে ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— মুফতি আবদুল হান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ মাওলানা সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই। আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া। এদের মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নান, মওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, আরিফ হাসান সুমন ও মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ মাওলানা সেলিম হাওলাদার কারাগারে রয়েছেন এবং অন্যরা পলাতক। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তাজউদ্দিন বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা সবাই কারাগারে। দণ্ডপ্রাপ্ত এই ১৪ আসামির মধ্যে শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল ছাড়া অন্যরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির শীর্ষস্থানীয় নেতা? শাহাদাত উল্লাহ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত নারায়ণগঞ্জের যুবদল নেতা মোমিন উল্লাহ ডেভিডের ছোট ভাই। সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানির জন্য ইতিমধ্যে ১৩৮০ পৃষ্ঠার পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। ছয়টি আপিল, তিনটি জেল আপিলসহ ডেথ রেফারেন্স শুনানির মাধ্যমে একসঙ্গে উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হবে। রায়ে বিচারিক আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই হত্যা মামলা কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়। বাঙালি জাতির ঐতিহ্য পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিরাও নিরীহ নাগরিক। এ অনুষ্ঠান কোনো নির্দিষ্ট দল, মত, গোষ্ঠী বা ধর্মের ছিল না। আদালত বলেন, বোমা হামলাকারীদের লক্ষ্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা গোষ্ঠী ছিল না। আয়োজক সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করাসহ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে কলুষিত তথা সংস্কৃতিচর্চা বন্ধ করার জন্যই এ বোমা হামলা চালানো হয়— উল্লেখ করে আদালত বলেন, বোমা হামলাকারী ও এর পরিকল্পনাকারীদের এই কাজ নিঃসন্দেহে নৃশংস, নির্মম, বর্বর, জঘন্য ও ক্ষমার অযোগ্য। স্বাধীন বাংলাদেশে নৃশংসতম, জঘন্যতম ও বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের মধ্যে এটি অন্যতম।

সর্বশেষ খবর