বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদের অবসান চান খুলনাবাসী

পারিবারিক বন্ধনই পারে দমন করতে —ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

জঙ্গিবাদের অবসান চান খুলনাবাসী

‘গুলশান থেকে শোলাকিয়া ট্র্যাজেডি’ —বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক এসব হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা বলে মনে করেন না খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি মনে করেন, এ ধরনের জঙ্গিবাদী মনোভাব কিছু স্বল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে আগে থেকেই ছিল। বিদেশি নাগরিক হত্যা, ব্লগার হত্যা, পুরোহিত-সেবায়েত হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বিভিন্ন সময় এ ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছে। আর গুলশান ও শোলাকিয়া হত্যাকাণ্ড তারই ধারাবাহিকতা আর চূড়ান্ত শক্তির প্রদর্শন। উপাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ‘হঠাৎ করে জেএমবি বা আইএস নাম ধারণ করে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়নি। এই বাংলাদেশে একসময় স্লোগান দেওয়া হয়েছে, ‘আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। জামায়াত-শিবির এই স্লোগান দিয়েছে। কাউকে ধরে নিয়ে চার মাস ট্রেনিং দিলেই সে জঙ্গি হয়ে ফিরে আসে না। এর পেছনে শক্ত বিস্তৃত সংগঠন আছে। জামা’আতুল মুজাহিদীন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল জিহাদ বিভিন্ন নামে এ ধরনের সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে। এই শিক্ষাবিদ বলেন, হিযবুত তাহ্রীর ও জেএমবিকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ছাত্রশিবির থেকে বেরিয়ে গিয়ে এগুলো করা হয়েছে। হত্যার ধরন দেখেই ধারণা করা যায়, এসবের পেছনে জামায়াত-শিবিরের হাত থাকতে পারে। তিনি বলেন, গুলশান-শোলাকিয়া হামলার পর, মানুষ খুন করার পর, কেন এ দেশের মসজিদ থেকে মিছিল বের হয়নি? কেন ইসলামবিরোধী কাজ হওয়া সত্ত্বেও জামায়াত-শিবির হরতালের ডাক দেয়নি? কারণ এর নেপথ্যে রাজনীতি আছে। অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ১৯৮৩-৮৪ সালে খুলনা বিএল কলেজের মসজিদে আসরের নামাজের পর আফগান ফেরত যোদ্ধাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো। বলা হতো, আমাদের ভাই আফগান যুদ্ধ শেষে গাজি হয়ে ফিরে এসেছেন। পরে সেই মানুষগুলো শিবিরের ট্রেইনার হিসেবে কাজ করেছে। এ দেশে আইএস নেই, তবে তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন আছে। তাদের আদর্শের মানুষ ও রাজনৈতিক দল এখানে আছে। তিনি বলেন, একটা গোষ্ঠীর মধ্যে রাজনৈতিক হতাশা কাজ করছে। কিছু শিক্ষিত মানুষ আছে, যারা ধর্মকে যথাযথভাবে অনুধাবন না করেই জঙ্গিবাদের দিকে যাওয়ার প্রয়াস পায়। পাশাপাশি রয়েছে এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পারিবারিক হতাশা। প্রযুক্তিগত কারণে পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এতে করে পারিবারিক হতাশা তৈরি হয়েছে। প্রাচুর্য আছে চারদিকে কিন্তু পারিবারিক বন্ধন-ভালোবাসা নেই। এ অবস্থা উচ্চবিত্তদের জঙ্গি সম্পৃক্ততার একটি অন্যতম কারণ। পারিবারিক বন্ধনই পারে জঙ্গিবাদ দমন করতে।

সর্বশেষ খবর