বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

উগ্রবাদী ধর্মান্ধতা ভাঙতে হবে

— শেখ আশরাফ উজ-জামান

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

উগ্রবাদী ধর্মান্ধতা ভাঙতে হবে

সব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকে। জঙ্গিবাদীরা মানুষ খুন করে তথাকথিত ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। কিন্তু এটা কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক চিন্তাধারা নয়। মানুষ উগ্র হলে তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তাই শুরুতেই উগ্রবাদী ধর্মান্ধতা ভাঙতে হবে। আর এ জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ-জামান। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গুলশান-শোলাকিয়ার মতো ঘটনা ঘটলে আমরা ভাবতাম, তা মসজিদ-মাদ্রাসার হুজুর, দাড়িওয়ালারা করবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এ ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। তাদের উগ্রবাদী ধর্মান্ধতায় বেহেশতে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে মোটিভেট করা হচ্ছে। আমাদের দেশে এ ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এক দিনে হয়নি। এটা ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর ও বৃহৎ আকার নিয়েছে। শেখ আশরাফ উজ-জামান বলেন, চাপের মুখে কখনো জঙ্গিবাদ হয় না। হয়তো বামপন্থি চারু মজুমদার, চীনপন্থি রাজনীতি হয়। কিন্তু এখানে মেধাবী তরুণদের মোটিভেট করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ানো হয়েছে। তাদের কাছে এটা এক ধরনের ‘রোমান্টিসিজম অ্যাডভেঞ্চার’। আর এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা। এই জঙ্গিবাদের পেছনেও একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন শেখ আশরাফ উজ-জামান।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ না থাকলে এটা হয় না। চরমপন্থি দল যারা করেছে, মাওপন্থি দল যারা করেছে, তাদেরও রাজনৈতিক দর্শন ছিল। প্রীতিলতা, সূর্যসেন, খুদিরাম দেশকে ভালোবেসে আত্মাহুতি দিয়েছেন। আর জঙ্গিরা হুরের লোভে আত্মাহুতি দিয়ে ভাবছেন এমন একটি দেশ সৃষ্টির কথা, যেখানে তারা নিজেরা সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু ইসলামে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান নেই। এটা মানসিক বিকারগ্রস্ত উগ্রবাদীদের চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বিপথে যাওয়া তরুণ-যুবকদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তাদের বোঝানো হয়েছে, বিধর্মীদের হত্যা করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে। এখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। জঙ্গিবাদ থেকে পরিত্রাণের জন্য গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন।

শেখ আশরাফ উজ-জামান মনে করেন, এ আন্দোলনে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, বিশেষ করে দেশের যুবসমাজকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুরো জাতি যেভাবে এক হয়েছে, বর্তমান সময়ে সেভাবে একত্র হওয়া কঠিন। এখনকার রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যাওয়া যেখানে মুখ্য হয়ে থাকে সেখানে জাতীয় ঐক্য হয় না। আমাদের দেশে আগে পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ছিল। সমাজে একজন অপরজনের নিয়মিত খবর রাখত। এখন নানা ব্যস্ততায় সমাজ ও পরিবারের বন্ধন ভেঙে গেছে। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় পরিবারে-সমাজে-রাজনীতিতে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সম্মানবোধ ফিরিয়ে আনা জরুরি।

সর্বশেষ খবর