শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
দেশের চিকিৎসায় চমক

বৃক্ষমানবের হাত স্বাভাবিক, প্রায় সুস্থ লোমশ বালিকা

জিন্নাতুন নূর

বৃক্ষমানবের হাত স্বাভাবিক, প্রায় সুস্থ লোমশ বালিকা

অকেজো সেই বৃক্ষমানবের হাত এখন কলম ধরতে পারে (উপরে)। কমতে শুরু করেছে বীথি আক্তারের শরীরের লোমও —বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত আবুল বাজনদার এখন স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার ডান হাত ব্যবহার করছেন। সফল অস্ত্রোপচারের পর তার ডান হাত এখন শেকড়মুক্ত। তিনি ডান হাত দিয়ে অবশেষে নিজেই ভাত খেতে পারছেন। কলম দিয়ে লিখতে পারছেন। আদরের সন্তানের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আগামী শনিবার আবুলের বাঁ হাতের অস্ত্রোপচার করা হবে। এর পরই শুরু হবে তার দুই পায়ের চিকিৎসা। বিরল এই রোগের সফল অস্ত্রোপচারকে বাংলাদেশের চিকিৎসাজগতে এক ‘মাইলফলক’ বলে মনে করছেন বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন। আর বৃক্ষমানবের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত আবুলের খোঁজ নিচ্ছেন। সোমবার ডা. সামান্তলাল নিজে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আবুলের শেকড়মুক্ত হাতের ছবি দেখালে শেখ হাসিনা তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে।’ তিনি এ সময় সামন্তলালকে আবুলের জন্য প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ডা. সামন্তলাল সেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মোট ছয়টি অস্ত্রোপচারের পর আবুল এখন তার ডান হাত স্বাভাবিকভাবেই নড়াচড়া করতে পারছে। এরই মধ্যে আবুলের বাঁ হাতে কয়েকবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। পাইকগাছা থেকে প্রথম যে আবুল আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন, সেই আবুলের সঙ্গে বর্তমান আবুলের অনেক পার্থক্য। এখন তিনি মানসিকভাবে অনেক সুস্থ। নিজের সন্তানকে নিজ হাতে আদর করতে পারছেন। এবার তার বাঁ হাত শেকড়মুক্ত করার পালা।’ ডা. সামন্তলাল জানান, সোমবার আবুলের ডান হাতের ছবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে ছবি দেখে প্রধানমন্ত্রী সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাকে বলেন, আবুলের সব চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিয়েছে। তার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি সামন্তলালকে নির্দেশ দিয়েছেন। আবুলের চিকিৎসা শেষে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী তাকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যাবেন বলেও জানান।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আবুল আগের চেয়ে বেশ সুস্থ। মুখে তার মিষ্টি হাসি। তিনি বলেন, ‘আমি আবার সুস্থ হয়ে উঠব এ ব্যাপারে চিকিৎসকরা আশাবাদী।’ ছয় মাস ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন ‘বৃক্ষমানব’ আবুল বাজনদার। ৩০ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আবুল ১০ বছর ধরে বিরল ‘ট্রিম্যান সিনড্রোম’ রোগে ভুগছিলেন। এতে তার হাতে-পায়ে শেকড়সদৃশ কিছু গজিয়ে ওঠে। এর ফলে খাওয়া থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব কাজে তাকে অন্যের সাহায্য নিতে হতো। তার মতো বিরল রোগে এর আগে পৃথিবীতে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছিলেন।

বীথির দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার : আবুল বাজনদারের মতোই আরেক বিরল রোগে আক্রান্ত রোগী বীথি আক্তার (১২)। মুখমণ্ডল দাড়ি-গোঁফ ও শরীরে মাত্রাতিরিক্ত রোম নিয়ে জন্ম নেওয়া বীথির সম্প্রতি দুই স্তনে অস্ত্রোপচার হয়েছে। জানা যায়, টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বীথি জন্ম থেকেই মুখে দাড়ি-গোঁফ ও শরীরে অস্বাভাবিক রোম নিয়ে জন্ম নেয়। ১১ বছর বয়স থেকে তার স্তন অস্বাভাবিক আকৃতি নিতে শুরু করে। এতে জ্বালাপোড়াও শুরু হয়। এমনকি সাত বছর বয়সে তার পড়ে যাওয়া দাঁতও আর গজায়নি। বীথিকে চিকিৎসার জন্য ১৬ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগে ভর্তি করা হয়। প্রথম দফায় ২০ জুন তার বাঁ স্তনে এবং ৩১ জুলাই ডান স্তনে দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার হয়। বিএসএমএমইউর প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম অস্ত্রোপচার করে। ডা. ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে স্তন অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটিই বড় অস্ত্রোপচার। তার স্তনের বাড়তি অংশ কেটে বয়স ও ওজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়েছে।

মেডিকেল সূত্র জানায়, বীথির প্রথম অস্ত্রোপচারের সময় সাড়ে সাত ঘণ্টার চেষ্টায় তার স্তন থেকে ৯ কেজি ৪০০ গ্রাম মাংস কেটে ফেলা হয়।

সর্বশেষ খবর