শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

পানিবন্দী গ্রামের পর গ্রাম

বরিশাল বরগুনা শরীয়তপুরে বন্যার অবনতি

প্রতিদিন ডেস্ক

পানিবন্দী গ্রামের পর গ্রাম

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া গ্রামের বসতবাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা এখন নদীগর্ভে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সারা দেশে বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকলেও বরিশাল, বরগুনা ও শরীয়তপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বরিশালে কীর্তনখোলা, মেঘনা, বরগুনার খাকদোন, বিষখালী, পায়রা নদীর পানি বেড়েছে। শরীয়তপুরে বহু গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ—

শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে বন্যার পানিতে ৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ১১০টি বিদ্যালয়ের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করার কারণে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া বন্যা ও ভাঙনের মুখে জেলার তিনটি উপজেলার ৩৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত ২৮ জুলাই থেকে শরীয়তপুরের বিভিন্ন গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করতে থাকে। এ কারণে জাজিরা উপজেলার ৭১টি, নড়িয়া উপজেলার ২২টি, সদর উপজেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নড়িয়ার দুটি উচ্চবিদ্যালয় ও জাজিরার পাঁচটি উচ্চবিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত বৃহস্পতিবার থেকে। বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ওঠার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা মহাপরিচালকের কার্যালয়ের নির্দেশে শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৩৬৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলা প্রশাসনের তদারকিতে বন্যার পর স্থগিত বিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষা নেওয়া হবে।

বরিশাল : উজান থেকে ধেয়ে আসা বন্যার পানি এবং অস্বাভাবিক জোয়ারের ফলে বরিশাল নগরীসহ জেলার আরও অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিকালে পাঁচ দিন ধরে জোয়ারের সময় কমপক্ষে তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দীগঞ্জ এবং গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার চরাঞ্চল। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে নদী ভাঙনও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এদিকে সদরের চরবাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ ও চরকাউয়া, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, বাবুগঞ্জ, মুলাদী উপজেলার বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় হাজার হাজার পরিবার সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে। এসব জায়গায় বহু ঘেরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কমলেও হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকলেও বানভাসি অনেক মানুষ এখনো ত্রাণসামগ্রী পাননি। প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, সরকারিভাবে প্রায় ২৮ লাখ টাকা, ৭৮৮ মেট্রিক টন চাল ও প্রায় দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অপ্রতুল। ফলে অনেক বানভাসি ত্রাণ পাননি।

এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরি, শাহজাদপুর উপজেলার কৌজুরী ও চৌহালী উপজেলার গোড়জান ও এনায়েতপুরে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। করতোয়া, ফুলজোর, হুরা সাগর ও চলনবিলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে এসব এলাকার শত শত পুকুরের মাছ।

ফরিদপুর : বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে নানা দুর্ভোগ। ফরিদপুর সদরসহ চারটি উপজেলায় বর্তমানে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। পদ্মার পানি বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী কয়েক দিনই পানি কমবে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। তাদের পক্ষে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বানভাসি মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে আমরা ব্যথিত। আমরা যে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে এসেছি তা বিতরণ করলাম। সমাজের বিত্তবানদের উচিত দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। 

ফুলবাড়ি (কুড়িগ্রাম) : গতকাল সকাল ১১টায় সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ার ক্লাব, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে উপজেলার শিমুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ১০৫টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া আশার আলো পাঠশালা বন্যাকবলিত তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের ২০৬টি গরিব ও দুস্থ পরিবারের মাঝে  ত্রাণ বিতরণ করে।

টাঙ্গাইল : সদর উপজেলায় বন্যাকবলিত দুর্গত মানুষের মাঝে গতকাল চাল, ডাল, চিড়া ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করেছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম। বিশিষ্ট শিল্পপতি ইনডেক্স গ্রুপের প্রধান নির্বাহী পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মনিরের সহায়তায় এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

ভাঙ্গা (ফরিদপুর) : বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গায় ‘আড়িয়াল খাঁ’ নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২০ দিনে ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের গজারিয়া, নাসিরাবাদ, কোষাভাঙ্গা, দুয়াইর, চরদুয়াইর গ্রামের দুই শতাধিক বিঘা জমি ও ৫১টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। হুমকির মুখে আছে ‘ভাঙ্গার তারাইল-সদরপুর-টেপাখোলা-গোয়ালন্দ’ সড়কের নাসিরাবাদ ইউনিয়নের দরগা বাজার এলাকার অর্ধকিলোমিটার। এ অবস্থায় গতকাল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের দরগা বাজারে ভাঙন ও বন্যাকবলিত ৫০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বন্যাকবলিত চরাঞ্চল এখলাছপুর, জহিরাবাদ ও মোহনপুর ইউনিয়নের ৭টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫ হাজার বন্যার্ত পরিবারের মধ্যে মাত্র ১০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মোহনপুর উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই ত্রাণ বিতরণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল চৌধুরী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বেলাল হোসেন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার স্থল চর এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে রাজিয়া খাতুন (৫) নামে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকালে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশু রাজিয়া ওই গ্রামের আবদুল করিমের মেয়ে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল হাসান বিশ্বাস জানান, দুপুরের দিকে বাড়ির পাশে খেলা করছিল রাজিয়া। এ সময় বন্যার পানিতে পড়ে ডুবে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে পাওয়া যায়নি। বিকাল ৪টার দিকে তার মৃতদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে।

সর্বশেষ খবর