শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জোয়ারে ডুবে যায় চাক্তাই খাতুনগঞ্জ

ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

জোয়ারে ডুবে যায় চাক্তাই খাতুনগঞ্জ

বৃষ্টি ছাড়াই দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জ ভাসছে জোয়ারের পানিতে। গতকালও চতুর্থ দিনের মতো টানা পাঁচ ঘণ্টা জোয়ারের পানির নিচে থাকে প্রধানতম এই তিন বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কোথাও কোমর সমান পানি, কোথাও হাঁটুপানি। দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে নষ্ট হয় মালামাল। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম এই তিন পাইকারি বাজারে দোকান, গুদাম ও আড়ত মিলে প্রায় এক হাজার ৩০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। দোকান ও আড়তের মুখের অস্থায়ী বাঁধও ঠেকাতে পারছে না জোয়ারের পানি। জানা যায়, জলাবদ্ধতা এখানকার পুরনো সমস্যা। কিন্তু বর্তমানে জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তির দাবিতে আজ থেকে আন্দোলনে নামছে ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি’। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করবেন ব্যবসায়ীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার থেকে জোয়ারের পানি ঢোকা শুরু হয়। গতকালও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়, চাক্তাই এলাকার রাজাখালী, অলি মিয়ার গলি, পোস্টঅফিস লেন, খাতুনগঞ্জ এলাকার চান মিয়া লেন, হামিদুল্লাহ খাঁ বাজার, নজুমিয়া লেন, ইসলাম ফয়েজ মার্কেট, চরচাক্তাই এলাকার ইসমাইল ফয়েজ রোড, আবুজাফর রোড, তক্তারপুল, মিয়াখান নগর, বাদিয়ার টেক, বাকলিয়ার খেজুরতলি বউবাজারসহ আশপাশের অনেক নিচু এলাকা। পানিতে ডুবেছে চাক্তাই, মিয়াখান নগর এলাকার শত শত কলোনিও। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেকান্দর বলেন, কর্ণফুলী নদীর নাব্য কমে গেছে। ড্রেজিং হয় না দীর্ঘদিন। তা ছাড়া চাক্তাই ও রাজাখালী খাল দুটি পড়েছে দখলের কবলে। ফলে পানি ঢুকলেও সহজে নামে না। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে আজ খাতুনগঞ্জে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করব। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, চার দিন ধরে পানিতে ব্যবসায়ীদের অনেক মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এতে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমরা সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানাতে জানাতে ক্লান্ত। দাবি নিয়ে এখন আর কেউ সোচ্চার হতে আগ্রহ দেখান না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা ১টায় শুরু হয় জোয়ারের পানি ওঠা। এর পর আস্তে আস্তে পানি বাড়তে থাকে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত পানি স্থির থাকে বিভিন্ন দোকান ও গুদামে। ব্যবসায়ীরা তাড়াহুড়া করে মালামাল সরানোর চেষ্টা করলেও নিচতলার অনেক গুদামে মাল থেকেই যায়। তা ছাড়া রাতের বেলার জোয়ারেও আরেকবার পানি ঢুকে। দৈনিক দুইবার জোয়ারের সময় পানি ঢুকে। একাধিক ব্যবসায়ী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। ২০০০ সাল থেকেই আমরা এ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আসছি। প্রতি বছরই বৃষ্টি কিংবা জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা সরকারের বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েছি। সর্বশেষ পানিসম্পদমন্ত্রী ও সিটি মেয়রকে ১০ দফা দাবি দিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছিলাম। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, চাক্তাই খালসহ মদুনাঘাট থেকে পতেঙ্গা নেভাল পর্যন্ত নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ ও ২৬টি খালের মুখে স্লুইচ গেট নির্মাণ করা হবে। আমরা চাই প্রকল্পটি দ্রুত সম্পন্ন করা হোক।

সর্বশেষ খবর