শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম হত্যায় জঙ্গি সংগঠন এবিটি

আলী আজম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম উদ্দিন ওরফে সামাদ খুনের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) জড়িত রয়েছে। গতকাল মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব বিষয় নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, এ ঘটনায় করা মামলায় মেহেদী হাসান অমি ওরফে ওসামা ওরফে আবদুল্লাহসহ অপর একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরা দুজনই এবিটির সদস্য। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী সাইফুল ইসলাম।

তিনিও এবিটির সদস্য। সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি শেষ করেন নাজিম। অনলাইনে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন তিনি। সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চেরও কর্মী ছিলেন। হেফাজতের আন্দোলনের সময় ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ যে কথিত তালিকা কয়েকটি গণমাধ্যমে এসেছিল, তাতে তার নামও ছিল। এদিকে ২০১৫ সালের ১২ মে সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপরই সতর্ক হন নাজিম। তাকে লেখালেখি না করার জন্য আত্মীয়-স্বজন চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। একই বছরের ৭ আগস্ট রাজধানীতে আরেক ব্লগার নিলয় চক্রবর্তী নীলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এবার বন্ধু-বান্ধবীরাও নাজিমকে লেখালেখি না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। ব্লগার নীল খুন হওয়ার কয়েকদিন পর সিলেট সদরের আম্বরখানার একটি দোকানে নাজিম চা খেতে গেলে ৪/৫ জন যুবক তাকে অনুসরণ করে। যুবকরা তাকে মারার চেষ্টা করতেই নাজিম দৌড়ে আম্বরখানা মেসে চলে যান। কাছের লোকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপও করেন। তারা বিদেশ বা গ্রামে চলে যাওয়ার জন্য নাজিমকে পরামর্শ দেন । নাজিম তখন লেখালেখি বন্ধ করে দেন। পরে তিনি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার টুকা ভরাউট নিজ গ্রামে চলে যান। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জবিতে এলএলএমে ভর্তি হন। থাকতেন বন্ধু সোহেল আহম্মেদের বাসা গেন্ডারিয়ার রজনী চৌধুরী রোডের ২৯/ঘ নম্বর বাড়ির ৭ম তলায়। তার সঙ্গেই জবিতে যাওয়া-আসা করতেন। নাজিম ঢাকায় এসেই আবার লেখালেখি শুরু করেন। দুই মাসের মাথায় ৬ এপ্রিল রাতে তিনি ক্লাস শেষ করে বন্ধু সোহেলের সঙ্গে ফিরছিলেন। ওই দিনই তার সিলেট যাওয়ার কথা ছিল। পথে একরামপুর মোড়ে নাজিমকে অতর্কিত চাপাতি দিয়ে একটি কোপ দেয় দুর্বৃত্তরা।

নাজিম দৌড় দিয়ে সুবর্ণ টেইলার্সের সামনে পড়ে যান। এ সময় তাকে ধরে মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। হত্যার আগে একরামপুর মোড়ে দুজন রিকসায় আসে এবং আগে থেকেই কয়েকজন একরামপুর মোড়ে অবস্থান করছিল। নাজিমকে হত্যার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় নাজিমকে বাঁচাতে যারা এগিয়ে এসেছিলেন তাদের দুর্বৃত্তরা বলেছিল, ‘ও আল্লাহর দুশমন, আপনারা চলে যান।’ পরে ঘটনাস্থল থেকে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিতে দিতে স্থান ত্যাগ করে জঙ্গিরা। সূত্র মতে, যারা নাজিম খুনে অংশ নেয় তারা সুশিক্ষিত ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিল। তারা দেখতে খুবই স্মার্ট ছিল। নাজিম খুনের ঘটনায় করা মামলা তদন্তে এবিটির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তাকে হত্যার পরিকল্পনা হয় সিলেটে আর বাস্তবায়ন হয় ঢাকায়। এই মামলার প্রথমে তদন্ত করে সূত্রাপুর থানা পুলিশ। পরে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। মামলাটি তদন্ত করেন সিআইডির পরিদর্শক শাহজানান। তখনই মামলার তদন্তে এবিটি সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। গ্রেফতার করা হয় জঙ্গি অমিকে। পরে মামলার তদন্তে আসে সিআইডির এএসপি এহসানের কাছে। এ সময় আদালতের নির্দেশে জঙ্গি অমিকে দুই দফায় রিমান্ডেও আনা হয়। সর্বশেষ মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিটকে। ডিএমপির সিটি ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম উদ্দিন খুনের ঘটনায় করা মামলার বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। জানা গেছে, অমি হিযবুত তাহ্রীর যোগদান করে। ২০০৯ সালে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলাও হয়। পরে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) হয়ে এবিটিতে যোগ দেয়। উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল রাতে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে জবির সান্ধ্যকালীন এলএলএম কোর্সের ষষ্ঠ ব্যাচের বি সেকশনের ছাত্র ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম উদ্দিন ওরফে সামাদকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন রাতে সূত্রাপুর থানার এসআই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ঘটনার পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, সিআইডি মাঠে নেমেছে। বতর্মানে মামলাটি তদন্ত করছে ডিএমপির সিটি ইউনিট।

সর্বশেষ খবর