রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিধ্বস্ত জনপদে শুধুই হাহাকার

মানুষ এখনো পানিবন্দী

প্রতিদিন ডেস্ক

বিধ্বস্ত জনপদে শুধুই হাহাকার

মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ২০ গ্রাম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোর অনেক স্থানে মানুষ আশ্রয়স্থল থেকে বসতিতে ফিরে গেলেও তাদের মাঝে কেবলই হাহাকার বিরাজ করছে। বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ বিধ্বস্ত হওয়ায় তাদের ঘুরে দাঁড়াবার মতো অবস্থা নেই। তার ওপর খাদ্য ও কর্মের অভাবে তারা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এদিকে বন্যার পানি কমতে থাকলেও প্রায় সব এলাকায়ই ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে চলেছে। বিভিন্নস্থান থেকে পাঠানো আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর—

ঝালকাঠি : ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা এখনো প্লাবিত হচ্ছে। সুগন্ধা-বিষখালী নদীবিধৌত ইউনিয়ন ও গ্রামে জোয়ার-ভাটার পানি বাড়া-কমা এবং ভাঙনে পানিবন্দী মানুষজন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নদী তীরবর্তী প্রায় ৩০টি গ্রামের ৮ থেকে ১০ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী রয়েছেন। কয়েকটি ইউনিয়ন রক্ষা বাঁধও ভেঙে গেছে। ফলে এসব এলাকার ঘরবাড়ি, স্কুল-মাদ্রাসা, হাটবাজার, দোকানপাট তলিয়ে আছে। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, বন্যাদুর্গত এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শুধুই হাহাকার। বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ হারিয়ে দুর্গতরা দিশাহারা। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত ভাঙনে জেলার প্রায় পাঁচ হাজার একর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সুগন্ধা ও বিষখালী নদী-তীরবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বহু মত্স্য খামার, পুকুর-ডোবায় চাষ করা মাছ পানিতে ভেসে গেছে। চলতি আমন বীজতলাসহ চাষ করা ধান ও বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) : রায়পুরের কাটাখালী, জালিয়ার চর, চরলক্ষ্মী, কানিবগার চর, টুনুর চর ও ঘাশিয়ার চর এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল এলাকার নদী, সংযুক্ত খাল, বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে আছে। গত শুক্রবার উপজেলার পুকুর, মাছের ঘেরের অন্তত অর্ধকোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এসব এলাকার বেশির ভাগ অঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি কমলেও জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো এখনো ডুবে রয়েছে। পানিবন্দী মানুষরা ওয়াপদা বাঁধে এখনো দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পুনরায় বাড়িতে ফেরা নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। কাজকর্ম না থাকায় তারা ঘর মেরামতের জন্য সরকারের প্রতি আর্থিক সহায়তা দাবি করেছেন। এদিকে পাউবো সঠিক সময়ে সংরক্ষণ কাজ শেষ করতে না পারায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলার সিলমায় ভাঙন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী করতোয়া, ফুলজোড় ও গাড়াদহ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলি জমিসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ছোনগাছা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল আলম জানান, বন্যায় তার এলাকায় প্রায় দুই হাজার বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি সহায়তা না পেলে ক্ষতিগ্রস্তরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। মাদারীপুর : ২৪ ঘণ্টায় মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার কমে এখনো বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে গত ৫ দিনে পদ্মা নদীর এই অংশে ৪৩ সেন্টিমিটার পানি কমলেও নদীভাঙনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনো রোপা আমন, পাট, শাকসবজিসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ফসলের মাঠই পানিতে তলিয়ে আছে। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীভাঙনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাগেরহাট : ভৈরব নদীতে বন্যার পানি বেড়ে সড়ক ভেঙে গতকাল আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বসতঘর পানিতে প্লাবিত হওয়ায় তাদের রান্না বন্ধ আছে। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যায় ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গতকাল ত্রাণ ও চেক বিতরণ করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। তিনি ভাঙনকবলিত নিঃস্ব ৪৫ জনের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করেন। একই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত স্বেচ্ছাসেবী ৬৪টি সংগঠনের প্রতিটিকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৫শ টাকার চেক প্রদান করেন। তিনি সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদে ২০০ পরিবারের মাঝে শিশুখাদ্য বিতরণ করেন।

সর্বশেষ খবর