রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

এখনো যন্ত্রণায় কাতর হাফ ডজন আওয়ামী লীগ নেতা

সিলেটে গ্রেনেড হামলার এক যুগ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট নগরীর তালতলার গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলার এক যুগ আজ। ২০০৪ সালের এই দিনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা শেষে নেতারা যখন খোশগল্প করছিলেন, এমন সময় গ্রেনেড হামলার ভয়ঙ্কর শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। তাত্ক্ষণিক মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী। আহত হন ২১ নেতা-কর্মী। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায়ও আহতদের যন্ত্রণা লাঘব হয়নি। স্প্লিন্টারে আহত অন্তত হাফডজন আওয়ামী লীগ নেতা আজও অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। দেশজুড়ে আলোচিত সিলেটে ওই গ্রেনেড হামলায় আহত হন সিলেট নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আলী, অধ্যাপক জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন, জুবের খান, তপন মিত্র, শেখ মখলু মিয়া প্রমুখ। আহত এসব নেতা এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি। স্প্লিন্টারের ক্ষতচিহ্ন এখনো তাদের শরীরে বয়ে গেছে। স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ অনেকের। শরীরে বিদ্ধ থাকা স্প্লিন্টারের অসহ্য যন্ত্রণায় প্রতিনিয়তই কাতর হন তারা। হামলায় আহত বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য শওকত আলী বলেন, ‘স্প্লিন্টারের আঘাতে আমার বাম পা নষ্ট হয়ে গেছে। ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় কাতর হতে হয়।’ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘গ্রেনেড হামলায় আমার পা, চোখ, পেট ও মাথায় স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়। তাত্ক্ষণিকভাবে পেট কেটে অপারেশন করা হয়। কোনোরকমে চলাফেরা করতে পারলেও এখনো মাথায় ব্যথা হয়, চোখ ও হাঁটু ফুলে যায়। প্রচণ্ড ব্যথা দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়।’ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন বলেন, ‘সারা শরীরে স্প্লিন্টারের আঘাত নিয়ে যন্ত্রণা সহ্য করে কোনোরকমে বেঁচে আছি।’ ওই হামলায় আহত হওয়া বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আজও মনে হানা দেয়। আমরা আহত হওয়ার পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ১২ আগস্ট আমাদের দেখতে সিলেটে আসেন। ২১ আগস্ট তিনি নিজেই হামলার শিকার হন। যদি তাত্ক্ষণিকভাবে ৭ আগস্টের হামলাকারীরা ধরা পড়ত, তবে ২১ আগস্টে হামলার ঘটনা ঘটত না।’ এদিকে ওই গ্রেনেড হামলার পর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হয়। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান মোল্লা, যুগ্ম আহ্বায়ক ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা এস এম নুনু মিয়াসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) জঙ্গিরা হামলায় জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দেয় আদালতে। পুলিশ মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুলসহ আট জঙ্গিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে আরও দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলার মধ্যে বর্তমানে বিস্ফোরক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ এবং হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়া চলছে।

সর্বশেষ খবর