শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

জাইকার কার্যক্রমে স্থবিরতা

মানিক মুনতাসির

জাইকার কার্যক্রমে স্থবিরতা

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নিহতের ঘটনায় জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে জাইকার সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। গুলশান হামলায় নিহত জাইকার সাত কর্মকর্তার পদ এখনো খালি রয়েছে। যদিও ৭ জুলাই পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর এক সপ্তাহের মধ্যে ওই পদগুলোর জন্য নতুন লোক পাঠানোর কথা বলেছিল জাপান। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত নতুন লোক আসেনি বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জাইকার বাংলাদেশ কার্যালয়ে মোবাইল, টেলিফোন ও ই-মেইলে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে জাইকার এক পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, গুলশান হামলায় নিহতদের স্থলে নতুন লোক এখনো আসেনি। তবে শিগগিরই আসবে। এ ছাড়া গুলশান হামলার পর বাংলাদেশে অবস্থানরত জাপানের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল তা এখনো বলবৎ রয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে জাইকার সর্বস্তরের কর্মকর্তার প্রতি কড়াকড়ি আরোপ করেছে জাপান সরকার বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এদিকে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। যদিও সরকার বলছে, স্থগিত নয় সময় বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে জাইকার আরও দুটি প্রকল্পে জাপানের নাগরিকরা কাজে যাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। মেট্রোরেলের কাজেও কিছুটা স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে জানানো হয়েছে এই স্থবিরতা কাটাতে না পারলে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে। তবে জাইকা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে সরছে না জাইকা। কিন্তু নিরাপত্তার বিষয়টি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। গত ১ জুলাই গুলশান হত্যাকাণ্ডে সাত জাপানি নিহত হন। তারা সবাই মেট্রোরেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফলে এ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের স্থলে নতুন বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক পাঠানোর কথা গত ১০ জুলাই চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল জাপান সরকার। জানা গেছে, গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাত জাপানি মূলত জাইকার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছিলেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী। তারা ঢাকায় মেট্রোরেল রুট ১ এবং মেট্রোরেল রুট ৫ প্রকল্পের সমীক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে কোইও ওগাসাওয়ারা কাজ করতেন কাতাহিরা অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্টারন্যাশনালে। হিরোশি তানাকা, হিদেকি হাশিমতো ও নোবুহিরো কুরোসাকি কাজ করতেন ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল নামক প্রতিষ্ঠানে। ওকামুরা মাকোতো কর্মরত ছিলেন আলমেক করপ নামক প্রতিষ্ঠানে। ইউকো সাকাই, শিমোদায়রা রুই আলমেক করপ নামক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।

এদিকে জাইকার প্রেসিডেন্টের (সিনিচি কিতাওকা) বাংলাদেশ সফরসূচিও স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অবশ্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশের জন্য জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থানরত তার দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর