শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

পানিতে ডুবল ঢাকার নিম্নাঞ্চল

ভোগান্তিতে বাসিন্দারা, বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই, নৌকা ও বাঁশের সাঁকোতে যাতায়াত

গোলাম রাব্বানী

পানিতে ডুবল ঢাকার নিম্নাঞ্চল

ঢাকা সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত নাসিরাবাদ এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। গতকাল তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দুঃখের শেষ নেই ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের। বর্ষা এলে পানি থই থই করে বাড়ির চারদিক। প্রায় দুই মাস পানিবন্দী থাকতে হয় তাদের। স্কুল-কলেজে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। বিশুদ্ধ খাবার পানি তো নেই, রান্নাবান্নাও করতে হয় চৌকির উপরে। নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় থাকে না। রাস্তাঘাটও ভেঙে গেছে বর্ষার পানিতে। অনেক বাড়িতে যাতায়াত করতে হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে। পোকামাকড়ের ভয়ে রাতেও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না জলমগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। হঠাৎ হঠাৎ সাপ ঢুকে পড়ে ঘরে। শিশুদের নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় থাকেন মা-বাবা, কখন তারা পানিতে পড়ে যায়। তবে এসব কোনো বন্যাদুর্গত এলাকার চিত্র নয়। গতকাল সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে ঢাকার নিম্নাঞ্চলে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃষ্টির পানির পাশাপাশি বালু নদ, শীতলক্ষ্যার মোহনা পথে পানি ঢুকে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ঢাকার নিম্নাঞ্চল। অনেক এলাকা পানিতে ভরে গেছে। টঙ্গী খাল দিয়েও পানি ঢুকে আশুলিয়া ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ মানুষ। বিশেষ করে ঢাকার পূর্বাঞ্চল, ঢাকার দক্ষিণ-পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তরাংশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নাসিরাবাদ ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রাম এক মাস ধরে জলমগ্ন হয়ে আছে। পানিতে থই থই করছে অনেক বাসাবাড়ির চারপাশ। মুসল্লিদের গতকাল নৌকায় করে জুমার নামাজ পড়ে আসতে দেখা গেছে। অনেক বাড়িতে রান্না করতে দেখা গেছে চৌকির উপরে। পানিবাহিত রোগে ভুগছেন শিশু-নারী ও বৃদ্ধরা। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা রয়েছে নাসিরাবাদের বালুপাড়া, গৌরনগরের পশ্চিম পাড়া, পূর্বপাড়া, ফকিরখালি, ঈদেরকান্দি গ্রামে। এ ছাড়া ত্রিমোহনী, ডেমরার পাইটি, আমুলিয়া, বাসাবোর পূর্বদিকের নন্দীপাড়া, মাদারটেক এবং বেরাইদ, সাঁতারকুলসহ পার্শ্ববর্তী অনেক এলাকার মানুষ এখন পানিবন্দী। আর চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের জীবনে। গৌরনগর গ্রামের বাসিন্দা আল আমিন বাবু বলেন, বর্ষা এলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দু্ই মাস পানিবন্দী থাকতে হয়। স্থায়ীভাবে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না করলে আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বলেন, আমরা নাসিরাবাদ ইউপির বাসিন্দারা নতুন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। আশা করছি সিটি করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধা পাব। এসব এলাকার পানি নিষ্কাষণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি। ফয়সাল নামের এক বাসিন্দা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আমাদের রাস্তাঘাট তৈরি করে দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। বর্ষা এলেই রাস্তায় পানি উঠে যায়। এখন রাস্তায় পানি না থাকলেও অনেক বাড়ির আঙ্গিনায় পানি রয়েছে। এমনকি তার বাড়িতেও বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয় বলে জানান তিনি। নাসিরাবাদ স্কুলের শিক্ষার্থী আশিক বলেন, বর্ষা এলে আমরা স্কুলে যেতে পারি না। এবার প্রায় এক সপ্তাহ স্কুল বন্ধ ছিল। আব্বু-আম্মুও বর্ষার সময় বাড়ি থেকে বের হতে দেন না। আমিনা নামের এক গৃহিণী বলেন, বর্ষার সময় ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারি না। চৌকির উপরে রান্না করতে হয়। ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি পাওয়া যায় না। ছেলেমেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমার হাত-পায়েও ঘা হয়েছে। অনেক সমস্যায় জীবনযাপন করছি। এদিকে যাত্রাবাড়ীর উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্বাংশ বাঁধ এলাকা দনিয়া, কাজলা, শনিরআখড়া, বাকেরপাট, রায়েরবাগ, মিরাজনগর, মোহাম্মদবাগ, মাতুয়াইল এলাকার নিম্নাঞ্চলও পানিতে নিমজ্জিত। ভারী বর্ষণে হলেই এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক বাসায়ও এখনো পানি জমে আছে। এ ছাড়া সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, ডেমরা, ভুঁইগড় এলাকা ছাড়াও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের ভিতরে বৃষ্টির পানি আটকে আছে। এসব ঘনবসতি আবাসিক এলাকার লোকজন পানিবন্দী রয়েছেন। তুরাগ থানার হরিরামপুর ইউনিয়নের বাওনিয়া, উলুদাহ এলাকার অনেক অংশ জলমগ্ন হয়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা ও সতর্কিকরণ কেন্দ্র বলছে— বালু নদ ও শীতলক্ষ্যার মোহনা পথের পানি নিম্নাঞ্চলে ঢুকেছে। যার ফলে পূর্বাঞ্চলীয় অনেক এলাকা পানিতে ভরে গেছে। টঙ্গী খাল দিয়েও পানি ঢুকে আশুলিয়া ও আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকা পশ্চিমাঞ্চলীয় বাঁধের বাইরে। পাউবো ঢাকাতে পানি ঢোকার আরও কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এটা হলো, ভারী বৃষ্টি হওয়া এবং অমাবস্যার প্রভাবে পানি বেড়ে যাওয়া।

সর্বশেষ খবর