শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

উপকূলজুড়ে উৎসবের আমেজ

পায়রা সমুদ্রবন্দরের আজ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কলাপাড়া প্রতিনিধি

উপকূলজুড়ে উৎসবের আমেজ

আমদানি পণ্য খালাসের মাধ্যমে আজ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে পায়রা সমুদ্রবন্দর। সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ চ্যানেলে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নবনির্মিত পায়রা বন্দরের কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। বন্দর প্রান্তে অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন ও নামফলক উন্মোচন করবেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এ সময় আরও উপস্থিত থাকবেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম (অব.), পটুয়াখালী-৪ আসনের এমপি মো. মাহবুবুর রহমান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক।

বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরের কম্পাউন্ডের মধ্যে ইতিমধ্যে একটি প্রশাসনিক অফিস, কর্মকর্তাদের থাকার জন্য আবাসিক ভবন, নিরাপত্তা ভবন, ব্যারাক হাউস, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, অভ্যন্তরীণ সড়ক, শুল্কায়ন কার্যক্রম ও বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের ৫৩ হাজার টন পাথর নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় (হিরণ পয়েন্টে) চীনা জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড অপেক্ষা করছে। আজ উদ্বোধনের পর জেটিসংলগ্ন নদীতে অপেক্ষা করা ১২টি লাইটার জাহাজ রাবনাবাদ চ্যানেলের বহির্নোঙর থেকে পণ্য খালাস করবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পায়রা সমুদ্রবন্দরের এই মেগা প্রজেক্টটি স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি— এ তিন ভাগে নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদের শেষ পর্যায়ের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে চলছে। একই সঙ্গে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদির কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। তবে দেশের তৃতীয় এই সমুদ্রবন্দরের কাজ পুরোপুরি শুরু হবে ২০১৮ সালে। পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য মোট ৬ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। জাহাজ নোঙর করতে মোট ১৬টি জেটি নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া বড় বড় জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করার জন্য ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম আগামী বছর শুরু করা হবে। বন্দরে নির্বিঘ্নে রাতেও কর্ম সম্পাদনের জন্য ৭০টি সৌরবিদ্যুৎ স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে। আপাতত পণ্যবাহী জাহাজ সমুদ্রে নোঙর করবে। বন্দরে ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য কেনা হয়েছে দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর। এ ছাড়া কলাপাড়ার ধানখালীতে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নিরাপদে জাহাজ চলাচলের জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত প্রায় ২৫ মাইল নৌপথে একটি ফেয়ারওয়ে বয়ার নির্মাণকাজ শুরু হবে। এ ছাড়া কালীগঞ্জ থেকে বন্দর পর্যন্ত অ্যাপ্রোচ চ্যানেল বয়া নির্মাণসহ মধ্য সাগরে জাহাজ নোঙরের জন্য মুরিং বয়া নির্মাণ, কর অঞ্চল নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাবনাবাদ মোহনা থেকে কাজল, তেঁতুলিয়া নদী হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত সমুদ্রের (নৌপথের) গভীরতা যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পায়রা বন্দর এলাকার মালামাল রাখতে গুদাম নির্মাণ, নদীপথে ড্রেজিং, নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ক্রয়, পাইলট বোট, টাগ বোট এবং অন্যান্য সরঞ্জামের জন্য ৮৫০ কোটি টাকা চেয়ে উন্নয়ন প্রস্তাব পাঠিয়েছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. সাঈদুর রহমান বলেন, আউটার অ্যাঙ্করেজ থেকে রাবনাবাদ চ্যানেলে প্রবেশের পথে পানির সর্বনিম্ন গভীরতা প্রায় ৫ মিটার। চ্যানেলের ভিতর এ গভীরতা ১৬ থেকে ২১ মিটার। চ্যানেলের ৩৫ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করা হলে জোয়ারের সময় ১৪ মিটার গভীরতা ও ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ এখানে ভিড়তে পারবে। মাদার ভ্যাসেলকে বহির্নোঙরে রেখে লাইটার জাহাজে এ বন্দর দিয়ে পণ্য ওঠানো-নামানো করা যাবে। এ বন্দর এলাকা এক্সক্লুসিভ জোনে পরিণত হবে। তিনি বলেন, নৌবাহিনীকে আধুনিক ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে শিগগিরই সাবমেরিন সংযোজিত হতে যাচ্ছে। দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দরের পাশে স্থাপিত এই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক নৌঘাঁটিতে নৌ-কমান্ডো, অ্যাভিয়েশন, জাহাজ ও সাবমেরিন বার্থিং সুবিধা থাকবে। এ এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি কনটেইনার ডিপো, শিল্প এলাকা, ইপিজেড ইত্যাদি গড়ে তোলা সম্ভব। এ বন্দরকে ঘিরে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর