শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

তিন বছরে অনুপস্থিত ৪৯৫ দিন

রোকেয়ার উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ইউজিসির কমিটি

আকতারুজ্জামান

তিন বছর এক মাস। দিন গুনলে ১ হাজার ১২৫ দিন। ওই সময়ে ৪৯৫ দিনই কর্মস্থলের বাইরে কাটিয়েছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়—বেরোবির উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক সময়ই তিনি কাটিয়েছেন তার চাকরিস্থল বেরোবির বাইরে। শতকরা হিসাবে তিনি ৪৪ শতাংশ দিনই অফিস করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন—ইউজিসির চেয়ারম্যান বরাবর সম্প্রতি বেরোবি শিক্ষক সমিতির করা এক অভিযোগে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বেরোবি উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে এই লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তারা। শিক্ষক সমিতির এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ২ আগস্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইউজিসি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত এ আদেশে তিন সদস্যবিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেনকে। শিগগিরই তদন্ত দলটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা লিখিত অভিযোগপত্রে বলেন, উপাচার্য অধ্যাপক নূর-উন-নবীর ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আজ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থা বিরাজ করছে। উপাচার্য গত তিন বছর এক মাসে ৪৯৫ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে এ অচলাবস্থা তৈরি করেছেন। এ অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি ছুটির দিন বাদ দিয়েই এ অনুপস্থিতির দিন হিসাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তিনি ঢাকাতেই থাকেন। মাঝেমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি অভিজ্ঞতা, দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু তার অনুপস্থিতি একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমই স্থবির করে দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ক্যাম্পাসে পড়ুয়া সাড়ে আট হাজার ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র চারটি বাস। কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে একটি। কিন্তু উপাচার্য একাই চড়েন তিনটি বিলাসবহুল গাড়িতে। শিক্ষক সমিতির ১২ দফা অভিযোগে আরও জানানো হয়েছে : বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী একজন উপ-উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে তার কোনো উদ্যোগ নেই। কোষাধ্যক্ষ পদ ২০১৩ সালের আগস্টে শূন্য হলেও সে পদ পূরণের উদ্যোগ নেই। এ ছাড়াও তিনটি অনুষদের ডিন, তিনটি বিভাগের প্রধান, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ একাই ১৭টি পদের দায়িত্ব পালন করছেন! উপাচার্যের ধারাবাহিক অনুপস্থিতিতে এই ১৭ পদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউজিসির সুপারিশ ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর ২০০৯ সালে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরিচালক হিসেবে গত তিন বছরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো উদ্যোগ নেননি উপাচার্য। এ ইনস্টিটিউটের অধীন আটজন কর্মকর্তা ও পাঁচজন কর্মচারী থাকলেও তাদের কোনো কাজ নেই! শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন, বহিরাগত দুষ্কৃতিকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর গত বছর হামলা চালালেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই নেননি অধ্যাপক নূর-উন-নবী। আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটি নির্বাহী প্রকৌশলী নিয়োগের একটি আবেদন বাতিল করলেও সেই প্রার্থীকে নিয়ম অমান্য করে নিয়োগ দেওয়াসহ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তদের বাঁচাতে উপাচার্য অধ্যাপক নূর-উন-নবী বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষক সমিতি। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবীর মোবাইলে মেসেজ ও কয়েক দফা কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, উপাচার্যের অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় আজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে শিক্ষক নেতাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আমি দিনাজপুরে আছি।’ পরে এক দিন অফিসে যেতে বলেছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর