শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

টানা বর্ষণের অজুহাত বেড়েছে চাল তেল মাছ সবজির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর নিত্য পণ্যের বাজারে ব্যবসায়ীরা চাল, ভোজ্যতেল, সবজি ও মাছের দাম বাড়িয়েছেন। এবারের অজুহাত টানা বর্ষণ। দাবি করা হচ্ছে, বন্যা ও বর্ষণের কারণে মৌসুমি ফলনের ক্ষতি হয়েছে এবং সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে।

গতকাল সকালে রাজধানীর বারিধারা ও গুলশান কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে শাক-সবজির দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। মাছের দাম বেড়েছে মান ভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। তবে চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও     নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কাঁচাবাজারে। তাই সব সবজির দাম বেড়েছে। করলা, পেঁপে, আলু, আমড়া, ঢেঁড়স, লাল শাক, লাউ শাক, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়াসহ প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। বারিধারা বাজার ঘুরে গত সপ্তাহের দাম বিবেচনায় দেখা যায়, প্রতি কেজি করলা ৪০ টাকার বদলে ৫০ টাকায়, ঢেঁড়স ৩০ টাকার বদলে ৪০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকার বদলে ২৫ টাকায়, মিষ্টি কুমড়ার শাক ৩০ টাকার বদলে ৪০ টাকায়, লাউ শাক ২৫ টাকা বদলে ৩০ টাকায়, লাল শাক ২০ টাকার বদলে ২৫ টাকায়, পালং শাক ২৫ টাকার বদলে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি হালি লেবু ১৫ থেকে ২০, কাঁচকলা হালি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এ বাজারে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম ছিল আগের সপ্তাহের মতোই। গরুর মাংস ৪২০ এবং ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া দেশি মুরগি মাঝারি আকৃতির প্রতিটি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি  হয়েছে। খাসির মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫০ টাকায়। গুলশান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দাম আবার বেড়েছে। এর মধ্যে ইলিশ, দেশি কই, বেলে, টাকি মাছের দাম বেশি চড়া। গত সপ্তাহে যে ৮০০ গ্রাম ইলিশ ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, তার দাম এখন ১ হাজার টাকা। দেশি কই ১৬০ টাকার বদলে ২০০ টাকা। বড় আকারের কৈ ৩৫০ টাকার স্থলে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া বেলে মাছ ৩৫০ টাকার জায়গায় ৪০০ টাকায়, পাঙ্গাস ১৫০ টাকায়, মৃগেল ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, বাটা ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়, টেংরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, শিং মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, রুই (দেশি) ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, কাতল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, মাঝারি তেলাপিয়া ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারের এক ক্রেতা নর্দ্দা এলাকার গোলাম ফারুক বলেন, ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। কখনো রমজান-ঈদ, কখনো গরম-শীত। আবার এখন বন্যা আর বৃষ্টি। বছরজুড়েই এদের অজুহাত আছে আর এসব অজুহাতে দাম বাড়ানোই এদের কারবার। এসব দেখার কেউ নেই। সাধারণ মানুষ একেবারেই অসহায়।

চট্টগ্রামে সবজির দাম স্থিতিশীল : চট্টগ্রামে নিত্য প্রয়োজনীয় মাছ ও সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গতকাল নগরীর নামকরা কাঁচাবাজার রেয়াজুদ্দিন বাজার, ২ নম্বর গেটের কর্ণফুলী মার্কেট, চকবাজার, বহদ্দার হাট ও কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে পণ্যের এ চিত্র পাওয়া যায়। বিক্রেতারা বলছেন, নগরীতে আসা সবজির বেশিরভাগই চট্টগ্রামের আশপাশের এলাকা থেকে আসে। তাই এ সপ্তাহে টানা বর্ষণ এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। রেয়াজুদ্দিন বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা রহিম উদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহের দামেই সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে সবজির দাম স্থিতিশীল আছে। বৃষ্টি বা বন্যার কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। প্রতিকেজি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০, ফুলকপি ১০০, পটোল ৩০, লাউ ৩৫, কাঁকরোল ৫০, ঝিঙ্গা ৪০, বেগুন ৫০, চিচিঙ্গাি ৩৫, বরবটি ৫০, পেঁপে ৪০ , আলু ২৪, শসা ৪০, করলা ৫০, শিম ৮০, চায়না গাজর ৭০, ভারতীয় টমেটো ৭০ ও কাঁচামরিচ ৮০ টাকা। মাছের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সামুদ্রিক মাছের মধ্যে প্রতি কেজি কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০, ইলিশ ১২০০ থেকে ১৪০০ ও রূপচাঁদা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। দেশি মাছের মধ্যে প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০, কাতলা ৪৫০, সিলভার কার্প ১৬০, পাঙ্গাশ ১৪০, ফার্মের কৈ ২২০ থেকে ২৫০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৫০, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭৫০, মাগুর ৬৫০ থেকে ৭০০, দেশি কৈ ৪৫০ থেকে ৬০০, শোল ৪০০ থেকে ৫০০ ও বোয়াল মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০ ও দেশি মুরগি ৩৫০ টাকা। গরুর গোস্ত হাড়সহ ৪৫০, হাড়ছাড়া ৪৮০-৫০০ ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।

সর্বশেষ খবর