রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘চোখত আন্দার দেহি সবই বানোৎ গেছে’

বন্যা গেছে যায়নি দুঃখ

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যাকবলিত এলাকার পানি নেমে গেলেও দুর্গত মানুষের মাঝে স্বস্তি ফেরেনি। তারা আশ্রয়স্থল থেকে ফিরেই দেখছেন সহায়-সম্পদের বিধ্বস্ত অবস্থা। এতে দুচোখে অন্ধকার দেখছেন অনেকেই। যেমন বগুড়ার সারিয়াকান্দি এবং ধুনট এলাকার অনেকে আহাজারি করছেন, ‘চোখত আন্দার দেহি, কী করনু, কুনটি যামু। সবই বানোৎ গেছে। খাউম কি?’—ইত্যাদি বলে।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার বাসিন্দারা আশ্রয়স্থল থেকে ঘরে ফেরা শুরু করলেও তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। রাস্তাঘাট, ফসল, ঘরের চাল-চুলা সব বন্যায় ভেসে গেছে। নতুন করে সংসার শুরু করতে তাদের হাহাকার করতে হচ্ছে। সরেজমিন ধুনটে দেখা গেছে, সড়ক পথজুড়ে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। কোথাও উঠে গেছে ইট, পাথর। দেখা যাচ্ছে অসংখ্য খানা-খন্দক। কোথাও   ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে গেছে সড়ক। ভেসে গেছে পাকা সড়কের মাটিও। সেখানে গভীর গর্তে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এই ধংসযজ্ঞকে সামনে রেখে দুর্গতরা কেবলই আহাজারি করছেন। কীভাবে বাঁচবেন, কীভাবে টিকে থাকবেন— এসব নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় আহাজারি করে চলেছেন। একইভাবে সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর অববাহিকায় বন্যাকবলিত নয়টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩৮ লাখ টাকার ফসলাদির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে বেশি রয়েছে উঠতি পাট, রোপা আমনের বীজতলা ও আমন আবাদি জমি এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। কৃষি অফিস বলছে, যমুনা তীর এলাকার ফসল ও জমির ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়েছে। চাষিদের নতুন করে আবারও মাঠে নামতে হবে। কৃষকদের সরকারিভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহযোগিতা করা হবে।

দেখা গেছে, বন্যা-পরবর্তী যমুনা নদীর চরাঞ্চলের লোকজন গৃহস্থালির রকমারি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউবা ঘর-দরজা মেরামত করছেন, আবার কেউবা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলাদি উদ্ধারে নাওয়া খাওয়া ছেড়েছেন। অনেকে সব হারিয়ে কান্নাকাটি করছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্য নয়টিতে বন্যার পানি ঢুকে পরায় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তার মধ্য ছয়টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ রূপে বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের ঘর দরজা, ফসলাদি ও উর্বর চরাভূমিতে বালির চর পড়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, চলতি বন্যায় জেলার শিবচরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে বিস্তীর্ণ রোপা আমনের। চরাঞ্চলের অধিকাংশ ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষক পরিবারগুলোতে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এদিকে পদ্মা, আড়িয়াল খাঁয় পানি কমতে থাকায় সহায়তা বাবদ দ্রুত বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণের দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। চরজানাজাতের কৃষক আ. খালেক বলেন, ‘বন্যায় আমার ৫ বিঘার রোপা আমন তলিয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। এখন কীভাবে সারা বছর চলব বুঝতে পারছি না।’ কাঁঠালবাড়ির কৃষক মো. আলী বলেন, ‘এ বছর বন্যায় আমার ৩ বিঘার সবজি খেতসহ চার বিঘার ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এখন সরকারিভাবে যদি সাহায্য না করা হয় তাহলে আমার মতো এলাকার বহু কৃষকই না খেয়ে মরবে।’

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুরে বন্যার পানি কমতে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। পানি বাড়ি-ঘর থেকে নেমে গেলেও এখনো বেশির ভাগ পরিবার বাড়িতে ফিরতে পারেননি। রাস্তা, সরকারি জায়গা, বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে হাজারো মানুষ বেশ কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। এদিকে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েকদিনে চরভদ্রাসন, সদরপুর উপজেলায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, কয়েকশ’ হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বন্যার পানিতে কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ফরিদপুর জেলার চারটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, বন্যার পানি নেমে গেলেও ভালো নেই জামালপুর জেলার নদী-তীরবর্তী এলাকার মানুষ। প্রায় দুসপ্তাহ স্থায়ী বন্যা ভেঙে দিয়েছে কৃষকের মেরুদণ্ড। নষ্ট হয়েছে জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব অসহায় মানুষের দিন কাটছে এখন চরম দুশ্চিন্তায়। ঘরে ফিরলেও অনেকের ঘরে খাবার নেই। এলাকায় মিলছে না প্রয়োজনীয় কাজ। ফলে দিনমজুর শ্রেণির মানুষের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা রোগ। গত তিন দিনে জেলায় ৫০ জনের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন ডায়রিয়ায়।

সর্বশেষ খবর