রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কলকাতা যাচ্ছে ঢাকার তদন্ত দল

কলকাতা প্রতিনিধি

পশ্চিমবঙ্গ থেকে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট—আইএস ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ—জেএমবির সদস্য সন্দেহে আটক মোহাম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু আল-মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কলকাতায় আসছে বাংলাদেশের তদন্তকারী দল। গতকালই দুই সদস্যের প্রতিনিধি দলটির কলকাতা পৌঁছানোর কথা। জানা গেছে, জুলাইয়ে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার তদন্তে অগ্রগতি আনতেই প্রতিনিধি দলটি মুসাকে জেরা করতে চায়। সূত্রে খবর, প্রতিনিধি দলটিতে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের একজন এসপি ও জুনিয়র কর্মকর্তা থাকবেন। ঢাকার জঙ্গি হামলার পেছনে জেএমবির সম্পৃক্ততাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বে রয়েছেন গোয়েন্দারা। মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা প্রধানত সে বিষয়েই পরিষ্কার হতে চাইছেন।

১ জুলাই ঢাকায় জঙ্গি হামলার পর ৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান রেল স্টেশনে বিশ্বভারতী ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার থেকে মুসাকে (২৫) আটক করে ভারতের তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ এবং পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ইমপ্রোভাইসড আগ্নেয়াস্ত্র, তিন রাউন্ড গুলি, একটি ধারালো ছুরি, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার মুদ্রা।

মুসাকে জেরা করে জানা যায়, ভারত-বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইএস নেতা ও জেএমবি নেতা মোহাম্মদ সুলেমানের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তার। মুসাকে জেরা করে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পান গোয়েন্দারা। তা হলো ভয়ঙ্কর খুনের ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসের উপস্থিতির কথা ঘোষণা করা। এ লক্ষ্যে মুসাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এক হিন্দু ব্যক্তিকে খুন করে এবং তার সঙ্গিনীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও তৈরি করে রাখা। পরে সেই ভিডিও সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের হ্যান্ডেলারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ওই হিন্দু নাগরিকের শিরশ্ছেদের ভিডিও সিরিয়া আইএসের হাতে পৌঁছানোর কথা ছিল। পরে এই জঙ্গি সংগঠনটির মিডিয়া উইংয়ের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর সেই ভিডিওর আপলোড করার পাশাপাশি ভারতে ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া।

জেরায় গোয়েন্দাদের কাছে মুসা জানান, যার কাছে এই ভিডিও তুলে দেওয়ার কথা ছিল তিনি হলেন জেএমবি জঙ্গি মোহাম্মদ সুলেমান। সুলেমানের তরফে মুসার কাছে স্পষ্ট নির্দেশ ছিল— অমুসলিমদের ওপর হামলা চালানো, তাদের শিরশ্ছেদ করা এবং তা ভিডিও রেকর্ড করে রাখার। সে কারণেই চেন্নাই থেকে হাওড়া হয়ে বীরভূমের দিকে যাচ্ছিলেন মুসা। বীরভূমের আহমাদপুর স্টেশনে আমিন ও কালু নামে দুই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল তার। তারপর এক ব্যক্তিকে খুনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গোয়েন্দাদের হাতে মুসা আটক হওয়ায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। মুসাকে জেরা করে গোয়েন্দারা আরও জানতে পারেন, গত বছরের মার্চে ছোট ভাইয়ের বিয়ের সময় বীরভূমে নিজের বাড়িতে আসেন মুসা। সেখানেই ‘জিহাদি জন’ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। পরে জানা যায় এই জিহাদি জন হলেন মোহাম্মদ সুলেমান। ভারতে আইএসের হয়ে কাজ করার জন্য মুসাকে উৎসাহ জোগান সুলেমান। মুসার সহায়তা নিয়ে এখানে রেশন কার্ড বানিয়ে নেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল সুলেমানের।

সর্বশেষ খবর