সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

শোক দিবসে আত্মপ্রচারে নেতারা

কেন্দ্রের নির্দেশ উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

শোক দিবসে আত্মপ্রচারে নেতারা

শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহত শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর নামে রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আত্মপ্রচারের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাদের বড় বড় রঙিন ছবি সংবলিত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফ্যাস্টুনে ছেয়ে গেছে সব অলিগলি, প্রধান সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন এলাকা। ব্যানার বিলবোর্ডে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির চেয়ে বিভিন্ন স্তরের নেতা, পাতি নেতা ও উঠতি নেতাদের ঢাউস আলোকচিত্র শোভা পাচ্ছে। শ্রদ্ধাঞ্জলি ব্যানারে শুধু নিজেদের ছবি দিয়েই তারা সন্তুষ্ট থাকেননি, বঙ্গবন্ধুর নাম গৌণ করে বড় আকারে লিখিয়েছেন তাদের নাম। দেখে মনে হয়, জাতির জনকের শাহাদাতবার্ষিকী পালন যেন উছিলামাত্র। মূলত শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর নামে নিজেদের জাহিরেই ব্যস্ত ক্ষমতাসীন দলের এই নেতারা। আওয়ামী লীগ থেকে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমলে নিচ্ছেন না কেউই। জানা গেছে, গত বছর ১৪ ডিসেম্বর চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতা-কর্মীদের ছবি সংবলিত বিলবোর্ড, ব্যানার, ফ্যাস্টুন ও পোস্টার ছাপানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করা যাবে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কিন্তু নেতা, উঠতি ও পাতি নেতা কেউই কর্ণপাত করেননি সে নির্দেশনা। এতে শীর্ষ নেতাদের অনেকেই যেমন ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তেমনি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে নিজের ছবি সাঁটানোর উদ্দেশ্যই হলো আত্মপ্রচারণা। আবার বঙ্গবন্ধুর ছবি ও নাম ছোট করে স্থাপন করে সেখানে প্রচারকারীর ছবি নাম বড় আকারে দেওয়াটা এক ধরনের ধৃষ্টতাও। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর নামে কেউ নিজের ছবি ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কয়েকদিন আগে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যানার-পোস্টার দিয়ে নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে হলে আগে জাতির পিতার আর্দশকে ভালোভাবে রপ্ত করতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নিজেদের আত্মপ্রচারণায় বড় বড় বিল বোর্ড, পোস্টার আর ফ্যাস্টুন টানানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। তাদের এ ধরনের বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার প্রভৃতি শোভা পাচ্ছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ চত্বর, সরকারি অফিসের আশপাশ, এমনকি পাড়া-মহল্লার রাস্তায়ও। এসবে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এক কোণায় ছোট পরিসরে স্থান পেয়েছে। আর বাকি অংশজুড়ে রয়েছে নেতাদের ছবি, নাম ও পদবি। রাজধানীর গুলিস্তান ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের চারপাশ জাতীয় শোক দিবসের ব্যানার-ফ্যাস্টুনে ছেয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কিছু পোস্টার ও বিলবোর্ড চোখে পড়ে সেখানে। একই অবস্থা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বেশ কিছু পোস্টার। যেখানে বঙ্গবন্ধুর চেয়ে নেতাদের ছবিই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বঙ্গবন্ধুর ছবির চেয়ে নিজেদের ছবিই বড় করে প্রকাশ করেছেন। ফার্মগেট তেজগাঁও এলাকায় ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিলবোর্ডে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট নয়জনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি তুলনামূলক এত ছোট যে জাতির পিতার প্রতিকৃতি কষ্ট করে বোঝা গেলেও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দূর থেকে বোঝা মুশকিল। কিন্তু ওই বিলবোর্ডে বড় করে শোভা পাচ্ছে সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ফরিদুর রহমান খান ইরান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি মো. দোলন সরকার, ১ নম্বর ইউনিটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রাইয়ানের ছবি যা কিনা বঙ্গবন্ধুর ছবির চেয়ে বড়। ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলের দিকে তাকালেই চোখ আটকে যায় একটি বিশাল বিলবোর্ডে। শেরেবাংলা নগর থানার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের এই বিলবোর্ডে মোট ১০টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে সব থেকে বড় ছবি রয়েছে ওয়ার্ডের সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের। শুধু ফার্মগেট, গুলিস্তান এলাকায় নয়, এমন শত শত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফ্যাস্টুনে ছেয়ে গেছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ওলি-গলিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অথচ দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা রয়েছে বিলবোর্ড, পোস্টারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া অন্য কোনো নেতার ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার করা যাবে না। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে শোক দিবসের ব্যানার-পোস্টারের ছবিতে মুখে হাসিও দেখা গেছে। তাহলে স্বভাবতই মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, নেতা-কর্মীরা কি শোক দিবসের মাহাত্ম্য অনুধাবন করতে পারেন না, নাকি নিছক প্রচারের জন্য এই আয়োজন যেখানে ব্যবহার করা হচ্ছে শোক দিবসকেও।

সর্বশেষ খবর