মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ক্ষোভ হতাশা, কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ মিলছে না চট্টগ্রাম সিটিতে

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ক্ষোভ হতাশা, কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ মিলছে না চট্টগ্রাম সিটিতে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) নগর উন্নয়নে চাহিদার বিপরীতে কাঙ্ক্ষিত অর্থ বরাদ্দ মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে থোকসহ নানা খাতে চসিকের মোট দাবি ছিল ৯৭২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে বরাদ্দ মিলেছে ২২৯ কোটি, যা দাবির মাত্র ২৩ শতাংশ।

নাগরিক সমাজের অভিযোগ, চসিককে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না দেওয়াটা চট্টগ্রামের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ। সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দিলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। অথচ চসিক উন্নয়নকাজ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর সুফল সরকারই পাবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে চসিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়ে অবহিত করে। কিন্তু পরে যদি অর্থ ছাড়ে গড়িমসি করে কিংবা কাঙ্ক্ষিত অর্থ না দেয় তাহলে উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হবে। মেয়র যেহেতু জনপ্রতিনিধি, তাই জনগণের কাছে তার একটা জবাবদিহিতা আছে। প্রসঙ্গত, বুধবার চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র ‘৫ শতাংশ ঘুষ ছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মেলে না এবং একটি প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড়ে একটি পাজেরো ঘুষ দাবি করেছেন’ বলে অভিযোগ করেছিলেন। এর পর থেকে চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে। চসিকের গত অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নগর উন্নয়নে চসিক সরকারের কাছে মোট ৯৭২ কোটি টাকা অনুদান চেয়ে পেয়েছে মাত্র ২২৯ কোটি টাকা। চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মনিরুল হুদা বলেন, চসিকের অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী’ পর্যন্ত খাল খননে ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার বিপরীতে অর্থ পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর ১৯৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ‘ডেভেলপমেন্ট অব চিটাগাং রোড বাই ইউজিং অ্যাসফল্ট প্লান্ট অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া অব চিটাগাং’ প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খাল খনন সংস্কার এবং নগরীর সড়ক সংস্কারে ৫২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার দুটি প্রকল্প নেয় চসিক। এর বিপরীতে গত এক বছরে বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ১২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। নগরের বিভিন্ন রাস্তা-ফুটপাথ উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের জন্য ১২৫ কোটি টাকা চাহিদা ছিল। এর বিপরীতে মিলেছে ৭০ কোটি টাকা। সিডিএমপি প্রকল্পে চাহিদা ছিল ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অর্থ মিলেছে ৬ কোটি ৪৯ লাখ। জাইকার বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে চাহিদা ছিল ১১৫ কোটি টাকা, বরাদ্দ মিলেছে ২৭ কোটি ৬১ লাখ। ২০১৫ সালের টানা বর্ষণে নগরীর অধিকাংশ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ২৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন সড়ক সংস্কারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দাফতরিক চিঠির মাধ্যমে মেয়র ১১২ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছিলেন। তাও পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট তহবিলের (বিএমডিএফ) অর্থায়নে দামপাড়া মাল্টিপারপাস বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ৩০ কোটি, হিজড়া খাল সম্প্রসারণে ৫০ লাখ, জলাবদ্ধতা নিরসনে গাড়ি-সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ২৫ কোটি, নগর ভবন নির্মাণে ১৫ কোটি, গার্মেন্ট পল্লী স্থাপনে ২০ কোটি টাকার চাহিদা ছিল চসিকের। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর