মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
সিটি করপোরেশন নির্বাচন

স্বতন্ত্র প্রার্থিতার শর্ত নিয়ে মতানৈক্য, বাদ যাচ্ছে বিতর্কিত প্রতীক

গোলাম রাব্বানী

দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার শর্ত নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনারদের এক পক্ষ চায় শর্ত বাদ দিয়ে, আরেক পক্ষ চায় ‘ন্যূনতম’ হলেও সমর্থনসূচক ভোটারের স্বাক্ষর দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখতে। এদিকে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক থেকে বিতর্কিত সব প্রতীক বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। বিশেষ করে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদের প্রতীক— শিল পাটা, মোড়া, কেটলি ও মুলাসহ সব বিতর্কিত প্রতীক এবার বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এসব প্রতীক নিয়ে বিতর্ক তোলেন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীরা। গত রবিবার স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনের আলোকে বিধি সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে কমিশন সভায়। ইসি সচিবালয়ের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে অন্তত এক হাজার ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এ ছাড়া আইনের অনেক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠক। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, গাজীপুরসহ অধিকাংশ সিটি করপোরেশনই ভোটার ও আয়তন অনুপাতে কয়েকটি সংসদীয় আসনের সমান। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থিতায় সামঞ্জস্য রাখার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হচ্ছে কমিশনকে। সংসদ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকার মোট ভোটারের ১ শতাংশের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হয়। তবে দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পৌরসভায় ১০০ জনের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর লাগলেও ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে তা বাদ দেওয়া হয়। এখন সিটি করপোরেশনে এ শর্তারোপ নিয়ে ঐকমত্য হতে পারেননি ইসি বলে জানান একজন নির্বাচন কমিশনার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কমিশনার বলেন, আমরা দুজন বলেছি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে শর্ত না দিলেই ভালো। আর দুজন বলেছেন, এক হাজার নয়, বরং অন্তত ২০০/২৫০ জনের স্বাক্ষর রাখলেও চলে। সংসদে ১ শতাংশ থাকলেও স্থানীয় ভোটে তা করা যাবে না, আবার শর্তারোপ বাদ দিলেও প্রার্থীর ছড়াছড়ি হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার বা পরবর্তী কমিশন সভায় এ নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি। ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহান বলেন, আমরা ১০০০  ভোটারের সমর্থন তালিকা রাখার প্রস্তাব দিয়েছি। এখন কেউ কেউ চাইছেন, ৫০০ অথবা ২০০ রাখতে, আবার কেউ কেউ শর্তটি বাদ দেওয়ার পক্ষেও মত  দেন। এ অবস্থায় পরবর্তী কমিশন সভায় সিইসি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে। তিনি জানান, দলীয়ভাবে হওয়ায় দলের প্রতীকের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর নতুন প্রতীক রাখা এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ‘সমালোচিত’ কিছু প্রতীক বাদ দিয়ে নতুন প্রতীক প্রস্তাব রাখার বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। প্রার্থীর সঙ্গে দলের ব্যয়সীমাও নির্ধারণ করা হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আচরণবিধিতেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার ব্যক্তিদের প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রাখা হতে পারে। তবে দলীয় প্রধানের পথসভা প্রচারণায় বাধা না থাকলেও জনসভা-সমাবেশে বিধিনিষেধ রাখা হবে। স্থানীয় আইন সংশোধনের পর প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে সিটি নির্বাচন হবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণবিধিতে সংশোধনী আনবে ইসি। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থিতা ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ রয়েছে মেয়র পদে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করছেন নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে বিধি সংশোধন ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে হাত দিতে চায় ইসি। স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা শেষে তফসিল করে ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধকে ভোটের উপযুক্ত বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকারের সিটি, উপজেলা, পৌর ও ইউপি ভোট দলীয়ভাবে করতে গত বছর নভেম্বরে বিল পাস হয়। এরপর ডিসেম্বরে পৌরসভা ও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-জুনে দলীয়ভাবে ইউপি ভোট হয়।

সর্বশেষ খবর