বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে পায়রা বন্দর

প্রথম পর্যায়ে ১০০ কিলোমিটার রেললাইন ব্যয় হবে ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা

মোস্তফা কাজল, পায়রা বন্দর (কলাপাড়া) থেকে ফিরে

রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রা। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হবে। রেলপথের পুরো কাজ তদারকি ও বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে এই রেলপথ পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। রেলপথটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১ হাজার ৯৯৮ কোটি এবং বিদেশি প্রকল্প সাহায্য ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) রেলপথটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। ইতিমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ঢাকা-বরিশাল-পায়রা বন্দর পর্যন্ত দুই ট্র্যাকের রেললাইন স্থাপনের পৃথক প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করে পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের নির্দেশনা দেন। এরপর ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য পিডিপিপি তৈরি করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পিডিপিপি অনুযায়ী সমীক্ষা প্রকল্পের প্রাক্কল্লিত ব্যয় ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার কোটি জিওবি এবং বৈদেশিক প্রকল্প সাহায্য ৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি খসড়া তৈরি করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। রেলপথ ও উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ বাবদ ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সিঙ্গেল লাইন এবং যোগাযোগ বাবদ ৪০০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া জনবল নিয়োগ ব্যয় বাবদ ২০ কোটি টাকা। পরামর্শক বাবদ ২০০ কোটি টাকা। স্টেশন নির্মাণ বাবদ ৩০০ কোটি টাকা। পরিবহন ও যানবাহন কেনা বাবদ ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশের সুরক্ষা বাবদ আরও ৫০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহউদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পায়রা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন করার জন্যই ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইনে ফরিদপুরে ভাঙ্গার অংশের সঙ্গে যুক্ত হবে এই রেলপথটি। এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পুরো প্রকল্পের রেলপথ স্থাপনের সব নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব কমে দাঁড়াবে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার এবং ভ্রমণের সময় লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা। এ রেললাইন নির্মিত হলে খুলনা, যশোর, বেনাপোল, দর্শনা, মংলা পোর্টের সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ স্থাপন হবে। এদিকে পায়রা বন্দর থেকে ঢাকা পর্যন্ত কনটেইনার পরিবহনে ডেডিকেটেড (পৃথক) রেলপথ নির্মাণ করতে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, পায়রা হবে দেশের অন্যতম গভীর সমুদ্রবন্দর। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্যের ডিপি রেইলও নামের একটি প্রতিষ্ঠানও এ-সংক্রান্ত নির্মাণ প্রস্তাব করেছে। আপাতত ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আর ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্তও সিঙ্গেল লাইন রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। এসব কারণে পায়রা বন্দর উন্নয়নে ২০টি প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর আওতায় ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ইওআই আহ্বান করা হয়েছে। এজন্য বৈদেশিক বিনিয়োগ আনার প্রস্তাবও করা হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯৯৬ সালের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব বাংলাদেশ রেলওয়ের।

সর্বশেষ খবর