বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শতাধিক শাখা ঝুঁকিপূর্ণ

সদ্য সমাপ্ত ডিসি সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ

মানিক মুনতাসির

সারা দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখাগুলোকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ব্যাংক শাখাগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনার এবং এসব শাখায় নিরাপত্তা প্রহরীর সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত ২৬ থেকে ২৯ জুলাই সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এ নির্দেশ দেন। ৩০টি জেলার শতাধিক ব্যাংক শাখাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব শাখায় অবশ্য ইতিমধ্যে নিরাপত্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকার মতিঝিল, টঙ্গী, গুলশান, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর এবং ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, ঝিনাইদহ, বগুড়া দিনাজপুর, কুষ্টিয়ায় স্থাপিত রাষ্ট্রায়ত্ত একাধিক ব্যাংকের শাখাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে অভিমত দিয়েছেন ওসব জেলার প্রশাসকরা। সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানান, এসব এলাকার পাশাপাশি সারা দেশের ব্যাংক শাখায় সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানোর প্রস্তুতি ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনুষ্ঠানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ কয়েকটি জেলার প্রশাসকরা প্রথমে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি ব্যাংকের সব শাখাকে অনলাইনের আওতায় আনার পাশাপাশি সিসিটিভির আওতায় আনার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয় বেসরকারি ব্যাংকের যেসব শাখায় নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে এবং সিসিটিভি নেই সেসব শাখায়ও নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের আড়ালে অবৈধ কোনো লেনদেন হচ্ছে কিনা-বা সন্দেহজনক লেনদেন হয়ে থাকলে সেগুলোর ব্যাপারে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংক খাতের নিরাপত্তার ঘাটতি নেই। তবে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকার রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকের কিছু শাখাকে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সব শাখাকে সিসিটিভির আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যার কাজ ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে শুরুও করেছে। সূত্র জানায়, ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ শাখাগুলোয় ইতিমধ্যে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি ভল্ট ও লকারের ব্যবস্থা রয়েছে এমন শাখাকে কঠোর নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। জানা গেছে, সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ব্যাংকের শাখা ৯ হাজার ২৫০টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে সাড়ে চার হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু সিসিটিভির আওতায় রয়েছে দেড় হাজারেরও কম শাখা। আর যেসব শাখায় সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে সেগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ ক্যামেরা বিকল হয়ে পড়ে আছে বছরের পর বছর। এ ছাড়া রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকসহ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর যেসব শাখা রয়েছে সেগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

জানা গেছে, সম্প্রতি নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যে অটো অ্যালার্ম সিস্টেমসের সংযোগ রয়েছে, তার সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ছাড়াও জরুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নম্বরের সংযোগ স্থাপন এবং সংকটজনক মুহূর্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দ্রুত সহায়তা করতে জেলা প্রশাসনকে সংযুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর