বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

মৌলভীবাজারের ‘সাতকরা’

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের ‘সাতকরা’

সিলেট বিভাগসহ মৌলভীবাজারের সাত উপজেলাবাসীর কাছে খাদ্য তালিকায় বাড়তি চাহিদার নাম ‘সাতকরা’। এখানকার প্রতিদিনের রান্নায়, বিশেষ করে মাংস জাতীয় তরকারি রান্নায় ‘সাতকরা’ যেন অপরিহার্য। এটি ছাড়া অধিকাংশ খাদ্যবিলাসী মানুষের রসনাবিলাসই যেন অসম্পূর্ণ। বড় আকারের মাছ ও মাংসের তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে ‘সাতকরা’ ব্যবহূত হয়। শৌখিন পরিবারের  সদস্যদের জিবে জল আনে এই ‘সাতকরা’। সিলেট ছাড়া অন্যান্য জেলায়ও ‘সাতকরা’ নামক ঐতিহ্যবাহী এ ফলটি পাওয়া যায় কদাচিৎ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত মৌলভীবাজারবাসী কাঁচা অথবা রোদে শুকিয়ে ‘সাতকরা’ নিয়ে যান প্রবাসে। বর্তমানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘সাতকরা’ চাষ হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে এগুলোর দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে কয়েকগুণ। তবুও সাতকরার কদর কেবল বাড়ছেই। গত ১৪ আগস্ট মৌলভীবাজার পুরাতন হাসপাতাল রোডে হেঁটে হেঁটে সাতকরা বিক্রি করতে দেখা যায় গোয়ালাবাজারের গোবিন্দ চক্রবর্তীকে। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে মৌলভীবাজার শহরে এসে হেঁটে হেঁটে প্রায় ১০০ হালি সাতকরা প্রতি হালি ৫০-৬০ টাকা করে বিক্রি করি। এভাবে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ও বাজারে অনেককে ‘সাতকরা’ বিক্রি করতে দেখা যায়। ব্যবসায়ী জুয়েল আহমদ বলেন, আমার পরিবারের সবার প্রিয় খাবার ‘সাতকরা’। এটা সারা বছর খাই। মৌসুম ব্যতীত অন্যান্য সময়ে খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সাতকরা শুকিয়ে রাখি। প্রবাসে থাকা আমাদের আত্মীয়স্বজনের কাছেও পাঠাই। অন্য ক্রেতা সুফিয়ান মিয়া বলেন, ‘সাতকরা’ তরকারির স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে মাংস ও মাছের তরকারি খেতে অনেক ভালো লাগে।  জানা গেছে, আঠারো শতকে ভারতের আসাম রাজ্যে ব্যাপকভাবে ‘সাতকরা’ চাষ হতো। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ‘সাতকরা’ চাষ শুরু হয় সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়। কমলালেবুর গাছের মতো লম্বা ও বড় হয়। বর্তমানে মৌলভীবাজার ছাড়াও হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলে ‘সাতকরা’ চাষ হয়ে থাকে। এ তিন জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় ‘সাতকরা’ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। মৌলভীবাজারবাসীর কাছে ‘সাতকরা’  যেন অমৃত। বর্তমানে ‘পাতলা’ ও ‘ছোলা’ নামে দুই প্রকারের সাতকরা বাজারে পাওয়া যায়। খরচ কম ও লাভজনক হওয়ায় অনেকেই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সাতকরা যে শুধু সুস্বাদু তরকারি ও টক তা নয়। এ ফলটি জনস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। বাত, শিরা-উপশিরা ব্যথায় যারা ভুগছেন তারা ‘সাতকরা’ খেলে এসব রোগ থেকে উপশম পেতে পারেন। এ অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নে সাতকরা অদ্বিতীয়। বর্তমানে সিলেট অঞ্চলের অনেক স্থানেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাতকরা চাষ করে কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল, বড়লেখা, জুড়ীতে প্রাকৃতিকভাবেই সাতকরার ভালো ফলন হয়। এখানকার সাতকরা বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে অর্থাৎ বাজারের দিনে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ও রবিরবাজার, জুড়ী উপজেলা ও ফুলতলা বাজার, বড়লেখা উপজেলা বাজার ও কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সাতকরা বিক্রি করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর