শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভাসমান সবজি বাগান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ভাসমান সবজি বাগান

সবজি উৎপাদনে সাফল্য বয়ে আনছে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ। রাসায়নিক, কীটনাশক ছাড়াই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন চলছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। পরিবেশবান্ধব ও ভাসমান সবজি উৎপাদন করে চাষিরা বেজায় খুশি। উন্মুক্ত জলাশয় কবলিত এলাকায়  বছরজুড়েই চলে সবজি উৎপাদন। মাটিতে নয়, জলাশয়ের ওপর বিছানার মাধ্যমে কচুরিপানার স্তূপের ওপর ভর করে কখনো কখনো মাচা বেঁধে ভাসমান এ সবজি চাষ করা হয়। লাল শাক, পুঁই শাক, মিষ্টি কুমড়া, ডাঁটা, শসা, চাল কুমড়া, কইডা, লাউ, মুলাসহ বিভিন্ন রকমের সবজি উৎপাদন হয় ভাসমান পদ্ধতিতে। এ এলাকায় জলেভাসা সবজি বাগানের চাহিদা বাড়ছে, উৎপাদনও ভালো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ গত কয়েক বছর ধরে জলাশয়ের ওপর ভাসমান সবজি বাগান করতে সবজি চাষিদের উৎসাহিত করছে। এতে ফলও মিলেছে ভালো। অন্তত ৪০০-৫০০ বিছানায় এখন সবজি চাষ করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, পরীক্ষামূলকভাবে সবজি চাষ করে কৃষকরা সফল হয়েছে। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। যেসব অঞ্চলে বছরজুড়ে পানি জমে থাকে তাদের কর্মসংস্থান এবং খাবারের চাহিদা মেটাতেই ভাসমান সবজি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশীয় এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকশ কৃষক এখন স্বাবলম্বী। তারা আশার আলো দেখছে।

সরাইল উপজেলার বাড়িউড়া, উচালিয়া পাড়া, চুন্টা, নাসিরনগরের চাতলপাড়. সদর ইউনিয়নসহ, বাঞ্ছারামপুরে বিস্তীর্ণ জলাবদ্ধ এলাকায় চলছে এ সবজি চাষ। সরাইলের কৃষক রমজান আলী ডাঁটা, লাল শাক, চাল কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি ভাসমান বাগানে চাষ করে লাভবান হয়েছেন। এ প্রযুক্তি দেশের জলাবদ্ধ কবলিত এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের সবজি চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।

কৃষক মিন্টু মিয়া অনুরূপভাবে করলা, শসা, লাল শাক, ঢেঁড়স, চাল কুমড়া উৎপাদন করে স্থানীয় মানুষের সবজি চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। কচুরিপানায় বিপুল পরিমাণ জৈব সার থাকায় কচুরিপানা পচার সঙ্গে সঙ্গে সবজিগুলো দ্রুত বড় হয়। অন্যদিকে পানি চলে যাওয়ার পর পচে যাওয়া কচুরিপানা মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়। ফসল উৎপাদনে তখন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভাসমান সবজি চাষে খরচ খুব কম। তেমন সার দিতে হয় না। শুধু পরিচর্যা করলেই চলে। শেষ হলে ধান চাষেও জমিতে তেমন সার দিতে হয় না। কারণ মাটির প্রাণ জৈব সার পচে যাওয়া কচুরিপানা থেকেই প্রাকৃতিকভাবে মিলে যায়। ভাসমান প্রতিটি সবজি বিছানার মধ্যে ৩০/ ৪০ কেজি সবজি উৎপাদন হয়। প্রতিটি বেড লম্বা থাকে ২০ ফুট। চওড়া থাকে ৪ ফুট। পানির নিচে গভীরতা থাকে ৩ ফুট। তবে সাবধানে চাষ করতে হয় ভাসমান সবজি। ওজন বেশি হলে পানিতে তলিয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য কোনো অবস্থাতেই সবজির ভারে বেডগুলোর ওজন অতিরিক্ত যাতে না হয় সে দিকে প্রতিনিয়ত নজর রাখতে হয়। প্রতিটিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা আর লাভ হয় ৪/৫ হাজার টাকা।

সরাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার জানান, কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বীজ প্রদান করা হয়েছে। এ উপজেলায় ৬০টি বেড তৈরি করা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু নাছের বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যেসব জায়গায় বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধতা থাকে সেসব জায়গায় ভাসমান সবজি উৎপাদন করার জন্য চাষিদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর