সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঝড় বজ্র বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি, নিহত ৮

ফরিদপুরে পাটকলের শেড ভেঙে মৃত্যু ছয়জনের, জলাবদ্ধতা ঢাকা-চট্টগ্রামে

প্রতিদিন ডেস্ক

ঝড় বজ্র বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি, নিহত ৮

চট্টগ্রামে গতকাল থেমে থেমে বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়ে মানুষ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। একই সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটেছে। ঘূর্ণিঝড়ে জুটমিল ধসে এবং গাছের নিচে চাপা পড়ে ফরিদপুরে ছয়জন, নওগাঁয় একজন এবং জামালপুরে বজ্রপাতে একজন নিহত হয়েছেন। শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ কয়েক স্থানে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

ফরিদপুর : বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় ছয়জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। সদর উপজেলার গেরদা, অম্বিকাপুর, কানাইপুর, আলিয়াবাদ ইউনিয়ন ও সালথা উপজেলার গট্রি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় গেরদা ইউনিয়নের বাখুণ্ডা গ্রাম। গ্রামের বেশির ভাগ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। উপড়ে যায় কয়েক হাজার গাছপালা। বাখুণ্ডা এলাকায় জোবাইদা-করিম জুটমিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মিলটির বিশাল আকারের টিনশেড থেকে কয়েকটি চালা উড়ে গিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে। এ সময় ভিতরে চার হাজার শ্রমিক কাজ করছিলেন। এসব শ্রমিক আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে অন্তত ৭০ জন আহত হন। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হযরত আলী নামে এক মিল শ্রমিক। হাসপাতাল থেকে আরও মারা যান বাখুণ্ডা গ্রামের কাঠমিস্ত্রি বিরেণ সিকদার। তিনি গাছের নিচে চাপা পড়েছিলেন। পরে জোবাইদা-করিম জুটমিলের ভিতর থেকে ফরিদপুরের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আরও তিনটি লাশ উদ্ধার করেন। এরা হলেন চান মিয়া, মালতি রানী ও আকাশ। এ ছাড়া কানাইপুর ইউনিয়নে গাছের চাপায় মারা গেছেন আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গাছপালা উপড়ে যাওয়ায় ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে যাওয়ায় ফরিদপুরে দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। আকস্মিক ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন। নওগাঁ : গতকাল বিকালে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে নওগাঁর তিনটি উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় গাছের ভাঙা ডালের চাপা পড়ে মনোয়ারা খাতুন (৪০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। মনোয়ারা মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের রহট্টা গ্রামের খাদেম আলীর স্ত্রী। এ ছাড়া জেহাদ (১০) নামে আরও এক স্কুলছাত্র গুরুতর আহত হয়েছে।

মানিকগঞ্জ : ঘূর্ণিঝড়ে আরিচা বন্দর এলাকার ১৫টি দোকান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয়ে উপজেলার আরিচা বন্দর এলাকায় আকস্মিকভাবে এ ঝড় আঘাত হানে।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মাত্র ৪০ সেকেন্ডের টর্নেডোতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কাছারি বাড়ির বকুল ও লিচুগাছসহ বেশ কয়েকটি গাছ এবং পৌর এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকার বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি ও গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার এ টর্নেডো আঘাত হানে।

মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জে পৃথক স্থানে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ১০টায় লৌহজংয়ের গাওদিয়ায় গ্রামে ও ১১টায় টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নের মটকপুর গ্রামে ঝড় আঘাত হানে। 

শরীয়তপুর : জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া গ্রামে ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মঙ্গল মাঝির লঞ্চ ঘাটের ২০টি দোকানও বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টার দিকে এ ঝড় পাঁচ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময় ঘরে চাপা পড়ে তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

জামালপুর : জামালপুরের বকশীগঞ্জে বজ্রপাতে নজরুল (২০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের শেখপাড়া এলাকায় দশআনী নদীতে পাট ধোয়ার কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় বজ পাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তিনি বকশীগঞ্জ উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের আবু বক্করের ছেলে।

চট্টগ্রাম : টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগরের অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলে পানি জমেছে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। নালা ও ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অনেক জায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জমেছে পানি। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও কোমর পানি। 

খাগড়াছড়ি : পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় খাগড়াছড়ি পৌর সভার চারটি এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ডুবে গেছে। এলাকাগুলো হলো— শব্দমিয়া পাড়া, পুরাতন জিপ স্টেশন, শান্তিনগর, মুসলিমপাড়া। এসব এলাকার লোকজন স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়ায় লোকজন গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

রাঙামাটি : টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে পড়ে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল সকালে রাঙামাটির সাপছড়ি এলাকায় এ ধসের ঘটনা ঘটে। এ সময় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ এক মাইল জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। 

বরিশাল : বরিশালে ভারি বর্ষণ ৪৯ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। এর আগে তারা ১৯৬৭ সালে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছিল। ভারি বর্ষণের কারণে বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোলা : দিনভর টানা বৃষ্টিতে ভোলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল ভোররাত থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টির সঙ্গে থেমে থেমে ধমকা হাওয়া বইছিল।  পটুয়াখালী : গতকাল ভোর সাড়ে ৫টা থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। শহরের অধিকাংশ সড়কেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও তলিয়ে গেছে বসতঘর ও মাছের ঘের। পৌর শহরের মহিলা আনসার ক্যাম্প রোড এলাকায় বড় বড় গাছ উপড়ে পরে রিকশা-গাড়িসহ সব ধরনের যান-বাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

কুষ্টিয়া : দুই ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে কুষ্টিয়ার জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। ফলে শহরের বেশির ভাগ সড়ক ডুবে যায়। শহরের প্রাণ কেন্দ্র এনএস রোডের বেশির ভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ে।

বাগেরহাট : ঝড়ো হওয়ার সঙ্গে ভারী বৃষ্টিতে জেলার নিম্নাঞ্চলসহ বাগেরহাট শহরের অধিকাংশ সড়ক হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় জেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নাটোর : বড়াইগ্রাম সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রামে আকস্মিক ঘুর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ৩০টি বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক খ্ুঁটি উপড়ে যাওয়ায় ঝড়ের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর