মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সরকারি অফিসে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিগত অর্থবছরগুলোর তুলনায় সংখ্যায় বেশি সেবা দিয়েও অর্থ ব্যয় হয়েছে চার ভাগের এক ভাগ। অর্ধেকের কম ব্যয় হয়েছে নতুন যন্ত্রাংশ কেনার ক্ষেত্রে। ফলাফল হিসেবে আগের ব্যয়ের সমপরিমাণ বরাদ্দ থেকে আট কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে সরকারি কোষাগারে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন ব্যতিক্রম চিত্র স্থাপন করতে পেরেছে সরকারি যানবাহন মেরামত কারখানা। দীর্ঘ সময় আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা এই প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক অডিটে বিগত অর্থবছরগুলোর চিত্রের সঙ্গে সর্বশেষ অর্থবছরের চিত্রের তুলনা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সমপদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সিনিয়র সচিব, সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসনের প্রাধিকারভুক্ত কর্মকর্তারাই এ প্রতিষ্ঠানের সেবা প্রার্থী। অধিদফতরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সরকারি যানবাহন মেরামত কারখানায় ৩৩১৯টি গাড়ি মেরামত করা হয়েছিল পাঁচ কোটি দুই লাখ টাকা ব্যয়ে, সেখানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৩৯৩টি গাড়ি মেরামতে ব্যয় করতে হয়েছে মাত্র দেড় কোটি টাকা। এ ছাড়া এসব মেরামত করা গাড়ির সচল পরীক্ষা করতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ২২ লাখ টাকা। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মাত্র ৩ দশমিক ৮ লাখ টাকার জ্বালানি পুড়েছে। আগের তুলনায় কম ব্যয় ১৮ লাখ টাকা। রেকর্ড অনুসারে, শুধু পার্টস ক্রয় বাবদই সরকারকে প্রায় ৩ দশমিক ৫২ কোটি টাকা কম ব্যয় করতে হয়েছে। অপরদিকে খুচরা যন্ত্রাংশ, পেট্রল ও লুব্রিকেন্ট এবং পুল মিনিস্টোরের তেল খরচ খাত হতে ৪ দশমিক ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় করে সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়েছে। হিসাব মতে, গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত সরকারি যানবাহন মেরামত কারখানা হতে সাত কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত হতে আরও এক কোটিসহ মোট আট কোটি অপচয় হতে রক্ষা পেয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, অবাক করার মতো অনেক কাণ্ডই এখানে ঘটেছে নিকট অতীতে। মামুলি ৮০০ টাকা বাজার দরের হুইল ক্যাপ এখানে ২০০ গুণ বেশি দামে কেনা হয় ১৬ হাজার টাকায়। ৫০০ টাকার এয়ার ফিল্টারের এখানকার সরকারি দর ৩৪০০ টাকা। ১৬ হাজার টাকার জিপ গাড়ির বাম্পার কিনতে সরকারি এ কারখানা পরিশোধ করে ৮১ হাজার টাকা। 

১২০০ টাকায় লিটার প্রতি যে রং সারা দেশের ক্রেতারা কিনে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি-সরকারি এ কারখানা তা কিনত ৯ হাজার ৬০০ টাকায়। সাধারণ গাড়ি ব্যবহারকারীরা যে ইলেকট্রিক কন্ট্রোলবক্স ২৫ হাজার টাকায় কিনতে পারেন সেখানে তার জন্য কারখানাকে পরিশোধ করতে হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। বাজারের সাড়ে ৮ হাজার টাকার টায়ার সরকারি মেরামত কারখানায় ঢুকলেই তার দাম হয়ে যায় সাড়ে ১১ হাজার টাকা। এরকম সব দরকারি পার্টস এবং মেরামতি আইটেমের দাম কয়েকগুণ ক্ষেত্র বিশেষ কয়েকশগুণ বেশি পরিশোধ করতে বাধ্য হতো এ সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানকে। সরকারি যানবাহন অধিদফতরের পরিবহন কমিশনার মুন্সী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, সরকারি টাকা অপচয় রোধ করতে নজরদারি, শৃঙ্খলা ও সমন্বয় এ তিনটি বিষয়ে আমরা জোর দিয়েছি। ফলে সেবা বেশি দিয়েও টাকার খরচ কমাতে পেরেছি। আমরা সেবা কমাইনি কিংবা গুণগত মানের প্রশ্নেও আপস করিনি। পাশাপাশি আমরা এখন অধিক মনোযোগী হয়েছি সেবার মানোন্নয়নে, আধুনিকায়নে ও সেবা প্রদান সংশ্লিষ্টদের মানসিক, নৈতিক ও পেশাগত মানোন্নয়নে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ও মাঠ প্রশাসনে যানবাহনের অভাবে যাতে কোনো কাজ থেমে না যায় সে জন্য অধিদফতর আরও যুগোপযোগী কর্মসূচি নিয়েছে। মেরামত কারখানাকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে মেশিনারিজ কেনা হয়েছে, এসব মেশিনারিজ সফলভাবে ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে কোনো সেবা প্রার্থী তার কাঙ্ক্ষিত এবং সর্বোচ্চ সেবা থেকে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন।

সর্বশেষ খবর