চট্টগ্রামের ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানায় অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ গ্যাস বেশি পরিমাণে মানবদেহে প্রবেশ করলে তা শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করবে। তবে মানবদেহের তুলনায় পরিবেশের জন্য এই গ্যাস বেশি ক্ষতিকর। স্বল্প সময়ের মধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে— এমন দাবি বিশেষজ্ঞদের। স্থানীয়দের দাবি, গ্যাস নিঃসরণের ফলে স্বল্প সময়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে মরছে ডিএপি সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার ঘেরের মাছ ও গৃহপালিত পশু। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই এলাকার গাছপালা ও খেতখামার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, অ্যামোনিয়া খুব দ্রুত পানির সঙ্গে মিশে যায়। পানিতে মেশার ফলে অ্যামোনিয়া হাইড্রো-অক্সাইড তৈরি হয়। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়ে ওই পানি বিষাক্ত হয়ে যায়। এতে করে ওই বিষাক্ত পানিতে বসবাস করা সব প্রাণী মরতে শুরু করে। মিশ্রিত পানি যেদিকে যাবে, পানিতে বসবাস করা সব প্রাণীর বেঁচে থাকার কোনো সুযোগ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিশাল অংশ কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে। পরবর্তীতে তা চলে যাবে সাগরে। তবে বৃষ্টি হলে হয়তো এর তিব্রতা কিছু কমবে। না হলে অনেক দিন অ্যামোনিয়া হাইড্রো-অক্সাইডের প্রতিক্রিয়া থাকবে পানিতে। বেশ কিছুদিন এর ক্ষতিকর প্রভাব থাকবে। এতে যে ক্ষতি হবে তা পূরণ করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে। চবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের ফলে ডিএপির সংলগ্ন এলাকায় পরিবেশগত অনেক ক্ষতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টি না হলে আরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চবির রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন বলেন, অ্যামোনিয়া গ্যাস ক্রিয়ার প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদি কোনো শারীরিক সমস্যা হবে না। তবে যা হবে তা স্বল্প মেয়াদি। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের পর নগরী ও আনোয়ারা উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জলাশয়ের মাছ থেকে শুরু করে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষতিকর প্রভাব। দুই দিন ধরে মরছে বিভিন্ন ঘের ও জলাশয়ের মাছ। একই সঙ্গে মারা যাচ্ছে গাছপালা ও খেতের সবজি। জেলা মত্স্য কর্মকর্তা প্রভাতী দে বলেন, অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের ফলে ১৯২ দশমিক ৮ হেক্টর মত্স্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। আনোয়ারার ১ নম্বর বৈরাখ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান বলেন, গ্যাস নিঃসরণের পর বৈরাখ এলাকার বেশ কিছু মত্স্য প্রজেক্টের মাছ ও পশুপাখি মারা গেছে। গতকালও কিছু কিছু প্রজেক্টের মাছ মরে ভেসে উঠেছে। মরে যাচ্ছে গাছপালা ও খেতের সবজি। একই ধরনের অভিযোগ করেন ডিএপির পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বারশত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুমও।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শিল্পমন্ত্রী : এদিকে ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানা পরিদর্শন করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এ সময় ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদ, বিসিআইসি, সিইউএফএল, ডিএপির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। পরে মন্ত্রী এ ঘটনায় অসুস্থ চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখতে যান। পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের শিল্পমন্ত্রী বলেন, গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচনের জন্য তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে কারও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে আনোয়ারা উপজেলায় ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানির অ্যামোনিয়া গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে গ্যাস ক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন কমপক্ষে দুই শতাধিক। এ ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছে বিসিআইসি ও জেলা প্রশাসক।