বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বিএনপির দুর্গে ফেরারি রাজনীতি

হামলা মামলা গ্রেফতারে ঘরছাড়া বগুড়ার নেতারা, নেই কর্মসূচি

আব্দুর রহমান টুলু, বগুড়া

নিজ দুর্গে ভালো নেই বিএনপি। মামলা, হামলা, জেল, গ্রেফতার, সরকারদলীয়দের দাপটে বগুড়ায় বিএনপির অনেক নেতাই এখন ঘরছাড়া। গ্রেফতার আতঙ্কে তারা বিভিন্ন স্থানে গা ঢাকা দিয়েছেন। দু-এক জন মুখচেনা নেতা-কর্মী ছাড়া তেমন কাউকে আর দেখা যায় না দলীয় কার্যালয়ে। কর্মসূচি থাকলেও উপস্থিতির সংখ্যা হাতে গোনা যায়। অথচ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ায় তারেক রহমানকে ঘিরে একদা উৎসবে মেতে ছিলেন নেতা-কর্মীরা। বগুড়ার হাওয়া ভবন খ্যাত ‘চম্পামহল’। এখানেও আর আগের মতো মানুষের ভিড় নেই। বগুড়ার রাজনৈতিকপাড়ায় এখন একটা কথা ভাসছে— ‘তারেক রহমান বগুড়ায় নেই, নেতা-কর্মীর খবর নেই’। বগুড়া জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে সাবেক ছাত্রনেতা ভিপি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে বর্তমান জেলা কমিটি যাত্রা করে। মূলত তখনই সরকারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়। বর্তমান কমিটি সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার পর জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুলসহ জেলার অনেক শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মামলার ভারে জর্জরিত। ফলত, জেলা সভাপতিসহ প্রতিটি স্তরের হাজার হাজার নেতা-কর্মী বাড়িছাড়া হন। সরকারবিরোধী আন্দোলন করে অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে যান। সরকারবিরোধী সেসব মামলায় এখনো অনেক নেতা কারাগারে। কারাগারে আছেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা—জাসাসের বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, শহর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মাসুদ রানা, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মিজানুর রহমান মিজান। অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে আজও ফেরারি জীবনযাপন করছেন সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেল, শহর বিএনপির সভাপতি মাহবুবর রহমান বকুল, সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক পশারী হিরু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরাফাতুর রহমান আপেল, জেলা ছাত্রদল সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম পিপলু। আর মামলায় মামলায় পরিশ্রান্ত হয়ে আছেন জেলা যুবদলের সভাপতি পৌর কাউন্সিলর সিপার আল বখতিয়ার। পৌরসভা নির্বাচনের আগে পুলিশ তাকে নাশকতা মামলায় গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। জেলে থেকে নির্বাচন করেও পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন জেলা যুবদল সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার। মামলায় জামিনে থাকলেও এখনো গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। মূল দল জেলা বিএনপি রাজপথে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে কিছুটা সরব থাকলেও পাশে নেই ছাত্রদল ও যুবদল। জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে এ দুটি দলের নেতা-কর্মীদের মামলা আর গ্রেফতার আতঙ্কে উপস্থিতি নেই। ফলে জেলা বিএনপিকে কর্মসূচি সফল করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়। বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শোকরানা, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন চাঁনসহ হাতে গোনা কয়েকজন নেতা-কর্মী দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন। জেলা বিএনপির অন্যতম ইউনিট বগুড়া জেলা যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও উপজেলা কমিটি দীর্ঘদিন যাবৎ পুনর্গঠন না হওয়ায় অনেক নেতা-কর্মী ঝিমিয়ে পড়েছেন। দলে গতি বাড়াতে এসব ইউনিট পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত দিয়েছেন অনেক নেতা। এদিকে বিএনপির নবগঠিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে বগুড়া থেকে স্থান পাওয়া কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতা। আবার অনেক ত্যাগী নেতা নির্বাহী কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন। তাদের সমর্থকরা বলছেন, ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। বগুড়ায় বিএনপির রাজনীতির প্রধান প্রেরণা দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ায় বলে ধানের শীষের জয়জয়কার হয়ে থাকে। জিয়ার পর বগুড়ার তৃণমূল মানুষের সঙ্গে মিশে তারেক রহমান হয়ে যান দলের শীর্ষ নেতা। বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০০১ সালের পর বগুড়াসহ উত্তরের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন। তারেক রহমানের দলীয় প্রচার-প্রচারণার বগুড়ায় অলিখিত কার্যালয় হয়ে ওঠে সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর নিয়ন্ত্রণাধীন বাড়ি চম্পামহল। এই চম্পামহল বগুড়ায় হাওয়া ভবন নামে পরিচিতি পায়। বগুড়ার রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার কারণে দলীয় অনেক নেতা-কর্মীই তারেক রহমানকে ঘিরে বলয় তৈরি করে ফেলেন। তারেক রহমানে নাম-পরিচয়েই হয়ে উঠেছেন অনেকে নেতা। এ কারণে বগুড়ায় তারেক রহমান এলে হাজার হাজার নেতা-কর্মী তাকে ঘিরে থাকতেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তারেক রহমান আর বগুড়ায় আসেন না বলে সেসব সুবিধাবাদী নেতা-কর্মীও দলের খোঁজ রাখেন না। তাই বগুড়ার রাজনৈতিকপাড়ায় একটি কথা ভেসে বেড়ায় তা হলো— ‘তারেক রহমান বগুড়ায় নেই, নেতা-কর্মীর খবর নেই’। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে রাজপথে থেকে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রতিটি কর্মসূীচ সফলভাবে পালন করা হয়। আগামী দিনেও সব কর্মসূচি যে কোনো মূল্যে সফল করা হবে। সব নেতা-কর্মীই কর্মসূচিতে থাকার চেষ্টা করেন। অনেক নেতা-কর্মী নিয়মিত আসছেন।’

সর্বশেষ খবর