গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে র্যাব-পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) দক্ষিণাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আমিরসহ সাত জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হাতবোমা, পিস্তল, গুলিসহ ম্যাগাজিন, গান পাউডার, ডেটোনেটর, চাকু, চাপাতি, প্রশিক্ষণের বই এবং সরঞ্জামাদি।
গাজীপুর থেকে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন জেএমবির মহিলা শাখার প্রশিক্ষক ও দক্ষিণাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আমির মো. রাশেদুজ্জামান রোজ (৩০), আবদুল হাই (৩৬), সাহাবুদ্দিন ওরফে শিহাব ওরফে রকি (২৩), ফিরোজ আহম্মেদ শেখ ওরফে ফিরোজ ওরফে আনসার (২৭), সাইফুল ইসলাম (২৯)। টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার হয়েছেন জুয়েল মিয়া (২৬) ও আবু সাইদ (২৪)।
র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, সম্প্রতি জেএমবির যে মহিলা সদস্যদের আটক করা হয় তাদের দেওয়া তথ্য ও স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, রাশেদুজ্জামান রোজ, আবদুল হাই চট্টগ্রাম ও সাহাবুদ্দিন পাবনা হতে টঙ্গীতে একত্রিত হয়ে নাশকতার জন্য বিস্ফোরকদ্রব্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গাজীপুরে ফিরোজ ও সাইফুলের কাছে গিয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব জানান দিতে নাশকতা পরিচালনা করা। তিনি আরও জানান, গত ১৬ আগস্ট র্যাব-৪-এর একটি টিম জেএমবি মহিলা শাখার নেত্রী আকলিমা, ২১ জুলাই গাজীপুরের টঙ্গী হতে জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের আমির মো. মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসান ওরফে তানভীরকে গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও জঙ্গি প্রশিক্ষকের নাম পাওয়া যায়। মাহমুদুল হাসান গ্রেফতার হওয়ায় ওই অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পায় জেএমবি মহিলা শাখার প্রশিক্ষক রাশেদুজ্জামান রোজ। তিনি কানাডার সেইন্ট মারিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ২০০৬-২০১২ পর্যন্ত অবস্থানকালীন সময়ে তার মধ্যপ্রাচ্য ও সিরিয়ান কয়েজন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সখ্যের ভিত্তিতে উগ্র জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হন। পরে তিনি দেশে ফিরে জেএমবির কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।র্যাব সূত্র বলছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১-এর একটি আভিযানিক দল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টঙ্গী এলাকা থেকে জেএমবির মহিলা শাখার প্রশিক্ষক ও দক্ষিণাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত আমির ঝিনাইদহ জেলা সদরের হলিদানীবাজার এলাকার খয়বর রহমানের ছেলে কানাডা ফেরত মো. রাশেদুজ্জামান রোজ ও তার সঙ্গী ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানার সাইটবাড়িয়া গ্রামের মৃত আশরাফুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আবদুল হাই এবং দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার মারুপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাহাবুদ্দিন ওরফে শিহাব ওরফে রকিকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, জিহাদি বই ও দুটি বিদেশি চাকুসহ গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোর ৫টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ছয়দানা হাজিপুকুর এলাকার মসজিদ সংলগ্ন লাইব্রেরি ও ফ্ল্যাক্সিলোডের দোকানে অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার বাদুল্লাহপুর গ্রামের সাইদুর রহমান শেখের ছেলে ফিরোজ আহম্মেদ শেখ ও মুন্সীগঞ্জের কলমাকান্দা থানার কৈলাদি গ্রামের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলামকে একটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, দুটি চাপাতি, ১২টি বিদেশি ছুরি, তিনটি ককটেল, পাঁচটি ডেটোনেটর, ৫০ গ্রাম পটাশিয়াম, ১৫টি চকলেট বোমা, ২৫টি ইলেকট্রনিক ক্র্যার্কাস, একটি ল্যাপটপ, বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই এবং বোমা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে গতকাল ভোরে কালিহাতি উপজেলার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ও বল্লভবাড়ি থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, জিহাদি বই ও ট্রেনিংয়ের ভিডিওসহ মধুপুর উপজেলার ব্রাহ্মণবাড়ী গ্রামের ছামাদ আলীর ছেলে জুয়েল মিয়া ও বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বাগড়া কলোনীর জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবু সাইদকে গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ।
এদিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবি সদস্য জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে বল্লভবাড়ি এলাকা থেকে আতোয়ার মিয়ার বাসার ভাড়াটিয়া অপর জেএমবি সদস্য আবু সাঈদকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বারুদ, অ্যামোনিয়া, ক্যাসিটার, সার্কিট, চাপাতি, বোমা তৈরির বর্ণনা সংবলিত খাতা, জিহাদি বই ও জেএমবির ট্রেনিং কার্যক্রমের ভিডিও সংবলিত মেমোরিকার্ড উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের নেতা গোপালপুরের মোসলেম সাংগঠনিক নাম সোহেল বলে জানিয়েছেন তারা। তাকে গ্রেফতারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।