শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মরে যাচ্ছে মাছ, শুকাচ্ছে গাছপালা

চট্টগ্রামে অ্যামোনিয়া গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণ

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

মরে যাচ্ছে মাছ, শুকাচ্ছে গাছপালা

চট্টগ্রামের ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট) ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাসক্রিয়ায় মরা মাছ বিক্রি হচ্ছে খোলা বাজারে। অ্যামোনিয়া-বিষাক্ত এ মাছ খেলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগে। বিকল হয়ে যেতে পারে লিভার, কিডনি। তাই মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে বিষাক্ত এসব মাছ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত ও পরিবেশ রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুমন গাঙ্গুলি বলেন, ‘অ্যামোনিয়া গ্যাসক্রিয়ায় মরা মাছ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে। আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে নানান রোগে। স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অ্যামোনিয়া গ্যাসক্রিয়ায় আক্রান্ত মরা মাছ না খাওয়াই উচিত।’ চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, ‘অ্যামোনিয়া গ্যাসক্রিয়ায় মরা মাছ খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য বিপর্যয় দেখা দেবে। ওই মাছ খাওয়ার ফলে সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি নানান রোগ দেখা দিতে পারে মানুষের শরীরে। লিডার ও কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গর্ভবতী নারীদের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া দেখা দিতে পারে অ্যালার্জি ও নানান শারীরিক সমস্যা।’

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঠেকাতে প্রাণিসম্পদ ও মত্স্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিচালনা করতে হবে মোবাইল কোর্ট।’

চট্টগ্রাম জেলা মত্স্য কর্মকর্তা প্রভাতী দে বলেন, ‘বুধবার ওই এলাকা পরিদর্শনকালে দেখেছি বিভিন্ন মত্স্য প্রজেক্ট থেকে স্থানীয়রা মাছ কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কুড়িয়ে নেওয়া মাছ বাজারে বিক্রি করছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। মরা মাছ খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এখনো পাইনি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের পর ডিএপি-সংলগ্ন এলাকার মাছের ঘের, ঘোনা এবং বিভিন্ন এলাকার জলাশয়ে মরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। এ সময় ভেসে ওঠা মরা মাছগুলো সংগ্রহ করছেন মাছের খামারি ও স্থানীয় লোকজন। সংগ্রহ করা মাছগুলো মঙ্গল ও বুধবার স্থানীয় বাজারে বিক্রিও করেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে বরফ ও অন্যান্য পন্থায় মাছগুলো সংরক্ষণ করেছেন পরবর্তী সময়ে বিক্রির জন্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিইউএফএল এলাকার এক সমাজসেবী বলেন, ‘অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের পর গ্যাসক্রিয়ায় মরা মাছ সংরক্ষণ করছেন খামারি ও স্থানীয় লোকজন। গত দুই দিন কেউ কেউ মরা মাছগুলো বাজারে বিক্রি করেছেন। মত্স্য প্রজেক্টের খামারিরা ক্ষতিপূরণের আশ্বাস না পাওয়ায় লোকসান এড়াতে অনেকটা বাধ্য হয়ে এ কাজটি করছেন।’ সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সোমবার রাতে ডিএপি সার কারখানার ১ নম্বর ইউনিটের অ্যামোনিয়া ট্যাংক বিস্ফোরণের পর প্রচুর পানি ছিটিয়ে ও কৃত্রিম বৃষ্টি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তা পরিশোধন না করায় পানি ও অ্যামোনিয়া দ্রবীভূত হয়ে বিষাক্ত অ্যামোনিয়া হাইড্রোঅক্সাইডে পরিণত হয়। ওই বিষাক্ত পানি গাঢ় বাদামি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশ এলাকায়। পরে নালা ও ছড়া হয়ে ঢুকে পড়ে ওই এলাকার বিভিন্ন জলাশয়, মত্স্য ঘোনা ও ঘেরে। এতে জলাশয়ে থাকা মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী মরে ভেসে ওঠে। জেলা মত্স্য অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, অ্যামোনিয়া বিস্ফোরণের পরবর্তী দুই দিনে ওই এলাকার কয়েকশ হেক্টর মত্স্য প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত মারা গেছে কমপক্ষে ৪২ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এতে মত্স্য খামারি ও স্থানীয়দের ২ কোটি টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে শুধু মত্স্য খাতে। যদিও ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি ও মত্স্য খামারিদের দাবি, জেলা মত্স্য অফিসের দেওয়া তথ্যের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। প্রসঙ্গত, সোমবার রাতে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে অ্যামোনিয়া গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে গ্যাসক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন দুই শতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করেছেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও জেলা প্রশাসক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর